চাঁদা তোলার ব্যস্ততা।
ভর্তি দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পরে পাঁচ মাসও কাটেনি। শহরের কলেজে ফের জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠল। এ বার অভিযোগের কেন্দ্রে মধ্য কলকাতার সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ। কলেজ ‘ফেস্ট’-এর জন্য পড়ুয়াদের থেকে প্রকাশ্যে রসিদ কেটে তিনশো টাকা করে তোলার দৃশ্য দেখা গেল কলেজ চত্বরেই। এমনকি, অনলাইন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে এক পড়ুয়ার থেকে ছাত্রনেতার চার হাজার টাকা নেওয়ার ছবিও প্রকাশ্যে এল।
গত জুলাইয়ে ভর্তি দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পরে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশে মাঠে নামে পুলিশ। গ্রেফতার হন অন্তত আট জন ছাত্র। তাঁরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। গত জুনে আবার সেন্ট পলস কলেজেই এক ছাত্রকে নগ্ন করে হেনস্থার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল পাঁচ ছাত্রকে। তাঁরা এখন জামিনে মুক্ত।
এক দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, ক্যাম্পাসে টেবিল পেতে বসেছেন কয়েক জন ছাত্রনেতা (লাইন জানাল, তাঁরা টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সদস্য)। টেবিলের সামনে দাঁড়ানো লাইন চলে গিয়েছে ক্যাম্পাসের মাঠ পর্যন্ত। এক ছাত্র চিৎকার করছেন, ‘‘আয়। নাম, রোল নম্বর বল। ৩০০ টাকা হাতে রাখ।’’ কীসের টাকা? প্রশ্নকারীকে কলেজের পড়ুয়া ঠাওরে ওই ছাত্র বললেন, ‘‘২৭ তারিখ থেকে ফেস্ট আছে, জানিস না। ৩০০ টাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়া।’’
চাঁদার রসিদ।
৩০০ টাকা দেওয়ার পর এক ছাত্রনেতা সই করে হাতে যে কাগজ ধরালেন তাতে লেখা, ‘স্টুডেন্টস হেল্প ফান্ড, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল কলেজ’। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজের টিচার ইনচার্জ দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘এ কী হচ্ছে! কলেজে এই ধরনের ফান্ড তোলার অধিকার কারও নেই।’’ তিনি জানান, ভর্তির সময়েই পড়ুয়াদের থেকে ‘স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ফিজ়’ বাবদ ৬০০ টাকা নেওয়া হয়। ‘ফেস্ট’এর নামে কারও থেকে ১০ হাজার, কোনও পড়ুয়ার থেকে জোর করে ২০ হাজার টাকা তোলার লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে দেবাশিসবাবুর কাছে।
ফোনে কথোপকথন
প্রথম কণ্ঠ: কাকুর সঙ্গে একটু কথা বলা। অন্তত হাজার দশেক টাকার ব্যবস্থা কর।
দ্বিতীয় কণ্ঠ: বাবাকে আমি বলেছিলাম। অত দেবে না। দুই-তিনের ব্যবস্থা হতে পারে।
প্রথম কণ্ঠ: পাঁচ?
প্রথম কণ্ঠ: পাঁচের চেষ্টা কর।
দ্বিতীয় কণ্ঠ: বাবা অত টাকা দেবে না। দুই-তিন হাজার দিতে পারবে বলেছে।
প্রথম কণ্ঠ: তা হলে তুই তিন-ই দে।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, ‘‘ভর্তি বাবদ ফিজ় ছাড়া এই ধরনের কোনও রকম টাকা তোলা অনুমোদন করা হবে না। কারও নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমাকে জানাক।’’
অনলাইনে টাকা দেওয়ার প্রমাণ।
আরও পড়ুন: বৈশাখী বিতর্কে শেষ পর্যন্ত সরতেই হল শোভনকে
২৭ তারিখ থেকে শুরু কলেজ ফেস্ট— ‘নেক্সাস’। চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। মুম্বইয়ের শিল্পী, প্রাক্তন ক্রীড়াবিদদের পাশাপাশি থাকছে নানা ‘ইভেন্ট’! সেজন্যই দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়ার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল। অভিযোগ, ভয়ে বেশ কিছু দিন কলেজে না-আসায় তাঁকে ফোন করে হুমকি দেন কলেজের কয়েকজন ছাত্রনেতা। বাধ্য হয়ে বাবার নম্বর ছাত্রনেতাদের দেন তিনি। ছাত্রের বাবাকেও জানিয়ে দেওয়া হয়, ছেলেকে কলেজে পড়াতে হলে ফেস্ট উপলক্ষে অন্তত চার হাজার টাকা দিতেই হবে। এর পরে ১৫ নভেম্বর অনলাইন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় মঙ্গলদীপ হালদার নামে এক ছাত্রনেতাকে তিন দফায় চার হাজার টাকা পাঠান ওই পড়ুয়া। টাকা চেয়ে তাঁকে ফোন করার একটি ভয়েজ রেকর্ডিং (রেকর্ডিংয়ের সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) পাঠিয়ে ওই ছাত্র বলেন, ‘‘দয়া করে আমার নাম প্রকাশ করবেন না। আগেও দেখেছি, এদের অনেক ক্ষমতা।’’ মঙ্গলদীপকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি শোনেন। পরে ‘‘কিছু বলতে পারব না’’ বলে ফোন কেটে দেন। কলেজের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ হালদারও বলেন, ‘‘কে টাকা নিয়েছে জানি না। খোঁজ করে দেখছি।’’