দুধকুমার মণ্ডল
নির্বাচনের খরচ বাবদ বকেয়া টাকা ফেরত পেতে এর আগে দলের নেতা দুধকুমার মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। কিন্তু তাতে ‘সুরাহা’ না হওয়ায় এ বার সেই অভিযোগ নিয়ে সরাসরি রাজ্য নেতৃত্বের দ্বারস্থ হলেন বীরভূমের একাধিক মণ্ডল সভাপতি।
দল সূত্রে খবর, সোমবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন দলের বেশ কয়েক জন মণ্ডল সভাপতি। দলের টিকিটে লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম কেন্দ্রের প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগকে কেন্দ্র করে আগেই গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, তা আরও জোরাল হয়েছে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনে দেওয়াল লিখন-সহ নানা কাজের জন্য দলের তরফে সরাসরি প্রার্থীর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়। খরচ অনুযায়ী সেই টাকা বুথ থেকে জেলাস্তর পর্যন্ত মিটিয়ে দেন প্রার্থী। দুধকুমার যেহেতু এ বার বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন, সেই হিসেবে তাঁর অ্যাকাউন্টেও বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ঢোকে বলে দলীয় সূত্রের খবর। অভিযোগ, দলের নেতারা নির্বাচনী প্রচারে টাকা খরচ করেছিলেন। অথচ সেই টাকা দুধকুমার পরে অনেককে মিটিয়ে দেননি। বকেয়া টাকা ফেরতের দাবিতেই চলতি বছর ১ সেপ্টেম্বর দুধকুমারের ময়ূরেশ্বরের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীদের একাংশ। সেই দলে ছিলেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভা এলাকার বেশ কিছু ব্লক সভাপতি, বিধানসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক, শক্তিকেন্দ্র প্রমুখেরা। কেউ আবার প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছিলেন। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা হলেও সমস্যা মেটেনি।
নেতাদের একাংশের দাবি, নির্বাচনী খরচ বাবদ কমপক্ষে এক একটি বুথে ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বীরভূম লোকসভা এলাকার দু’হাজারেরও বেশি বুথে সেই অনুযায়ী টাকা এলেও তার একটা অংশই দুধকুমার দিয়েছেন। নিচুতলার কর্মীরা টাকা পাওয়ার জন্য মরিয়া। কিন্তু তাঁদের সেটা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই রাজ্য নেতৃত্বকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। দল সূত্রে খবর, রাজ্য সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের মোট ২৬ জন মণ্ডল বা ব্লক সভাপতিদের মধ্যে অন্তত ১৩ জন রয়েছেন। তাঁদেরই একাংশ বলছেন, ‘‘ওই বিষয়টা বর্তমান জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের নজরেও এনেছিলাম। কিন্তু তিনি বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে না দেখায় বাধ্য হয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে জানাতে হয়েছে।’’ শ্যামাপদবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমাকে জানিয়ে কেউ রাজ্যের কাছে অভিযোগ জানাননি। রাজ্য নেতৃত্বের তরফেও আমাকে কিছু বলা হয়নি। না জেনে মন্তব্য নয়।’’ দিলীপবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। বীরভূমের পর্যবেক্ষককে বলা হয়েছে, দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে। তদন্তে যা উটে আসবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দুধকুমার নিজে বলছেন, ‘‘দলের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে গণতান্ত্রিক ভাবে নেতা-কর্মীরা রাজ্য সভাপতির কাছে অভিযোগ করতেই পারেন। এতেও কোনও অন্যায় নেই। আর আমি কোনও অন্যায় করে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে রাজ্য সভাপতি যদি কোনও ব্যবস্থা নেন, সেটা মাথা পেতে নেব।’’