মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ইন্ডিগোর বিমান কলকাতার আকাশে চক্কর কাটায় চক্রান্তের অভিযোগ উঠেছিল আগেই। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। সে দিন ডিউটিতে থাকা এটিসি অফিসার এবং ইন্ডিগো বিমানের পাইলটকে শুক্রবার জেরা করেছে। এর মধ্যেই শুক্রবার রাজ্য পুলিশের তরফে বিমানবন্দর থানায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করা হল। সেখানে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পদক্ষেপ করেছে ডিজিসিএ-ও। ইন্ডিগোর পাইলট এবং তাঁর সামনে থাকা এয়ার ইন্ডিয়া ও পিছনে থাকা স্পাইসজেটের পাইলটকে এ দিন বসিয়ে দিয়েছে ডিজিসিএ। ওই তিন পাইলটই সে দিন এটিসি-কে ‘লো-অন-ফুয়েল’ বার্তা পাঠিয়েছিলেন। ওই পাইলটরা এখন বিমান চালাতে পারবেন না। তাঁদের ‘ভুল শোধরানোর প্রশিক্ষণ’ নিয়ে তা ডিজিসিএ-কে জানাতে বলা হয়েছে। এটিসি-র ওই অফিসারকেও আপাতত বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের মামলা করায় বিস্মিত বিমান পরিবহণ মহল। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ইন্ডিগোর বিমান কলকাতায় নামার সময়ে জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয়। কারণ, ইন্ডিগোর পাইলট এটিসি-র অফিসারকে জানিয়েছিলেন, কলকাতার আকাশে চক্কর কাটার মতো বেশি জ্বালানি তাঁর কাছে নেই। যদিও তাঁর কাছে তখন পরিবর্ত বিমানবন্দর হিসেবে রাঁচিতে উড়ে গিয়ে সেখানেও ৩০ মিনিট চক্কর কাটার মতো জ্বালানি ছিল। কলকাতায় এটিসি অফিসারেরা জানান, বিমান পরিবহণ নিয়ে যে কোনও অভিযোগের তদন্ত করে ডিজিসিএ। পাইলট বা এটিসি অফিসারদের ভুলের কারণে কখনও জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে, তা-ও দেখার দায়িত্ব তাদের। ‘‘তা হলে কেন জ্বালানি বিভ্রাটের তদন্ত করবে পুলিশ? ওই উড়ানে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বলেই কি?’’ — প্রশ্ন এক এটিসি কর্তার।
অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ আসলে কার দিকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এটিসি-কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, বুধবার রাতের পর থেকে মন্ত্রী-নেতাদের কথাবার্তা বলে দিচ্ছে, ইন্ডিগোর পাইলটের বিরুদ্ধে নয়, তাঁদের অভিযোগ মূলত সংশ্লিষ্ট এটিসি অফিসার তথা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এটিসি অফিসারদের দাবি, সেই রাতে তাঁদের যে অফিসার ডিউটিতে ছিলেন, তাঁর সঙ্গে ইন্ডিগোর পাইলটের কথোপকথন টেপ-এ ধরা আছে। ওই অফিসার তখন জানতেন না যে ইন্ডিগোর বিমানে মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। কারণ, সে কথা পাইলট তাঁকে জানাননি।
কিন্তু তার পরেও কি ওই এটিসি অফিসারের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠতে পারে? এক এটিসি অফিসারের কথায়, ‘‘আমাদের একটু ভুলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। প্রতিটি যাত্রীর জীবন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই এক জন অফিসারকে এই ঘটনায় জড়িয়ে ফেলা ঠিক নয়।’’
পুলিশের এক কর্তা জানান, নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়নি। একটি তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তার জন্য প্রয়োজনীয় নথি পেতে গেলে প্রমাণ দরকার। তাই এফআইআর করা হয়েছে। তাই বলে খুনের চেষ্টার অভিযোগ? এক পুলিশ কর্তার যুক্তি, ‘‘যদি দুর্ঘটনা ঘটত, তা হলে তো মানুষ মারা যেত। তাই, খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।’’ পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘হতেই পারে কারও দোষ ছিল না। আমরা তদন্ত করে সে রকম কিছু পেলে সেই রিপোর্টই আদালতে জমা দেব।’’
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জয় জৈন এ দিন বলেন, ‘‘যে কোনও তদন্তই হোক, আমরা মুখোমুখি হতে রাজি। আমরা পুলিশকে যথাসম্ভব সাহায্য করব।’’