জঙ্গলপথে ট্রেন চলাচলে ফের জারি সতর্কতা

এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় ফের মিলতে শুরু করেছে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার-ব্যানার। তার কোনওটিতে রয়েছে সংগঠন বাড়ানোর আহ্বান, কোনওটিতে সশস্ত্র প্রতিরোধের ডাক। এরই মধ্যে সিপিআই (মাওবাদী)-র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিন থেকে জঙ্গলপথে রেল চলাচলে জারি হল সতর্কতা। রবিবার রাত থেকে এক সপ্তাহ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর-টাটানগর শাখায় নিরাপত্তার বিশেষ আয়োজন থাকবে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত ও দেবরাজ ঘোষ

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩৪
Share:

মাওবাদী নাশকতা মোকাবিলায় ঝাড়গ্রামে এসে পৌঁছেছে ‘রেলওয়ে ক্যাম্পিং কোচ’। এই কোচেই আরপিএফের বিশেষ বাহিনী এবং রেলের কারিগরি কর্মীরা থাকবেন। —নিজস্ব চিত্র

এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় ফের মিলতে শুরু করেছে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার-ব্যানার। তার কোনওটিতে রয়েছে সংগঠন বাড়ানোর আহ্বান, কোনওটিতে সশস্ত্র প্রতিরোধের ডাক। এরই মধ্যে সিপিআই (মাওবাদী)-র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিন থেকে জঙ্গলপথে রেল চলাচলে জারি হল সতর্কতা। রবিবার রাত থেকে এক সপ্তাহ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর-টাটানগর শাখায় নিরাপত্তার বিশেষ আয়োজন থাকবে।

Advertisement

রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ছিল সিপিআই (মাওবাদী)-র দশম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এই উপলক্ষে ২১-২৭ সেপ্টেম্বর ‘প্রতিষ্ঠা সপ্তাহ’ পালনের ডাক দিয়েছে মাওবাদীরা। এই পর্বে পশ্চিমবঙ্গ ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীরা রেল-নাশকতা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রেল সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘সাবসিডিয়ারি মাল্টি এজেন্সি সেন্টার’ (এসএমএসি) নামক সংস্থার তরফে সম্প্রতি আরপিএফের শীর্ষ মহলকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়। কেন্দ্র, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানকারী এসএমএসি ছাড়াও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর মাওবাদী হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

তার ভিত্তিতেই ২১ সেপ্টেম্বর রাত দশটা থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত জারি করা হয়েছে চরম সতর্কতা। এই ক’দিন খড়্গপুর থেকে টাটানগর পর্যন্ত রাতে দূরপাল্লার ট্রেন চলাচলের আগে পাইলট ইঞ্জিন চালানো হবে, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝাড়গ্রাম স্টেশনে থাকবে ‘রেলওয়ে ক্যাম্পিং কোচ’। ওই কামরায় আরপিএফের ‘কুইক রেসপন্স টিম’ ছাড়াও থাকবেন রেলের কারিগরি বিভাগের কর্মীরা। এ ছাড়া রাতের ট্রেনগুলিতে বাড়তি আরপিএফ এবং আরপিএসএফ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছ। খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্র, রাজ্য এবং রেলের গোয়েন্দা দফতর সূত্রে প্রাপ্ত সতর্কবার্তার ভিত্তিতেই রেল সুরক্ষায় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে জানানো হয়েছে।”

Advertisement

রেল সূত্রের খবর, মাওবাদীদের ডাকা বন্ধ-অবরোধ, মাওবাদী সংগঠনের বর্ষপূর্তিতে এর আগেও জঙ্গলমহলে ট্রেন চলাচলে সতর্কতা জারি হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়কাল এবং এলাকা উল্লেখ করে এ ভাবে বিশেষ সতর্কতা জারি হয়নি। জানা গিয়েছে, আরপিএফের খড়্গপুর ডিভিশনের সিনিয়র সিকিউরিটি কমিশনার চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করেছেন ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার, ডিভিশনাল অপারেটিং ম্যানেজার, খড়্গপুর, টাটানগর ও কটকের রেল পুলিশ সুপার, খড়্গপুর থেকে টাটানগর পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশন কর্তৃপক্ষ এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলা, পূর্ব সিংভূম ও ময়ূরভঞ্জের পুলিশ সুপারকে।

জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বে বেশ কয়েক বার রেল-নাশকতা চালিয়েছিল মাওবাদীরা। কখনও রেললাইনের প্যানড্রোল ক্লিপ খুলে কখনও আবার ব্যানার ও নকল মাইন দিয়ে ট্রেন চলাচলে বাধা দেওয়া হয়েছিল। ট্রেনে হামলা চালিয়ে আরপিএফের অস্ত্র লুঠও হয়। তারপর ২০১০ সালের মে মাসে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৪৮ জন যাত্রী। তারপর দীর্ঘ দিন জঙ্গলমহলে রাতে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ফের রাতে ট্রেন চালানো শুরু হয়, তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে।

মাওবাদী মোকাবিলায় বিশেষ সতর্কবার্তা জারি হলেও এ নিয়ে সংশয় রয়েছে আরপিএফের একাংশের মধ্যেই। কারণ, ২০০৯-১০ সালের অশান্তি পর্বে জঙ্গলমহলের কয়েকটি স্টেশনে আরপিএফ পোস্টে কর্তব্যরত কর্মীদের অস্ত্র প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অস্ত্র লুঠের আশঙ্কায় নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত এখনও বহাল থাকায় ওই সব এলাকার আরপিএফ অফিসারদের সার্ভিস রিভলবার পর্যন্ত নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরপিএফের এক আধিকারিক বলেন, “আমাদের তো নিধিরাম সর্দার দশা। কিছু হয়ে গেলে কী ভাবে যে মোকাবিলা করব, বুঝতে পারছি না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement