Cyclone Yaas

সুন্দরবনে সুগন্ধি ধান চাষে জোর

হরিণের গায়ের রঙের সঙ্গে মিল আছে হরিণখুরির। হরিণের চোখের কাজলের মতো ধানের গায়েও কালচে বেগুনি ফোঁটা।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২১ ০৬:১৪
Share:

প্রতীকী চিত্র।

নিত্য ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা এবং নোনা জল ঢুকে কৃষিজমির দফারফা হওয়াটা সুন্দরবন-সহ উপকূলবর্তী বঙ্গে কার্যত বচ্ছরকার দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্দশামোচনে সাবেক দেশি সুগন্ধি ধান চাষে জোর দিচ্ছেন কৃষিবিশারদেরা।

Advertisement

“উচ্চ ফলনশীল ধানের তুলনায় উৎপাদন কম। কিন্তু বন্যার পরে দক্ষিণবঙ্গে কিছু দেশি ধানই জমি এবং কৃষি-জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খায়। তাই কয়েকটি এলাকায় দেশি সুগন্ধি চালের উৎপাদনে বিশেষ পরিকল্পনা করা হচ্ছে,” বললেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সহ-কৃষি অধিকর্তা কাজল চক্রবর্তী। বর্ধমান ও নদিয়ার গোবিন্দভোগ, দিনাজপুরের তুলাইপাঞ্জি, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের কালো নুনিয়া, বীরভূম ও বাঁকুড়ার রাঁধুনিপাগলের মতো দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের ঝড় ও প্লাবনপীড়িত এলাকাতেও উঠে আসছে কনকচূড়, চামরমণি, দুধের সর, হরিণখুরির নাম। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিসিকেভি) বিজ্ঞানীদের পরামর্শে ওই সব ধানের চাষে হাত লাগাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। গত বছর জুনেই দিল্লিতে ‘প্রোটেকশন অব প্ল্যান্ট ভ্যারাইটিজ় অ্যান্ড ফার্মার্স রাইটস অথরিটি’র স্বীকৃতি পেয়েছে হরিণখুরি। সাগরদ্বীপ, গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, নামখানায় ঘূর্ণিঝড় আমপান, ইয়াসের প্রবল ধাক্কায় বিপর্যস্ত চাষিদের মধ্যে এই সপ্তাহেই হরিণখুরির বীজ বিলির কাজ শুরু হচ্ছে। বিসিকেভি-র সুগন্ধি চাল প্রকল্পে পূর্ব মেদিনীপুরেও এই ধানের চাষ চলছে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, অনেক জায়গাতেই বীজতলা ডুবে গিয়েছে। যৌথ বীজতলা তৈরি করে বীজ রোপণ চলছে। এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব পাচ্ছে দেশি ধান চাষও।

হরিণের গায়ের রঙের সঙ্গে মিল আছে হরিণখুরির। হরিণের চোখের কাজলের মতো ধানের গায়েও কালচে বেগুনি ফোঁটা। মাঝারি সুগন্ধের এই চালে চমৎকার পায়েস হয়। জয়নগরের মোয়াখ্যাত কনকচূড়ের মতো হরিণখুরির খই, চিঁড়েও উপাদেয়। সোঁয়াযুক্ত এই ধানের ফলন হেক্টর-পিছু আড়াই থেকে তিন টন। বিসিকেভি-র গবেষণায় প্রকাশ, ১৮৭৬ সালে হান্টারের মেদিনীপুর, হুগলির সমীক্ষা গ্রন্থে হরিণখুরির কথা আছে। ১৯০১-এ নিত্যগোপাল মুখোপাধ্যায় বর্ধমানেও হরিণখুরির চাষের কথা লিখেছেন। বিসিকেভি-র সহায়তায় সাগরের একটি কৃষক সমিতি সম্প্রতি উদ্ভিদবৈচিত্র রক্ষায় কেন্দ্রীয় পুরস্কার পায়। হরিণখুরি-সহ বেশ কয়েকটি লুপ্তপ্রায় দেশি ধান চাষের প্রকল্পে যুক্ত কৃষক সংগঠনের সদস্য শুকদেব নাথ বললেন, “জমি শতকরা ৩০ ভাগ লবণাক্ত হলেও এই সব ধানের চাষে কোনও সমস্যা হয় না। পূর্ব মেদিনীপুরের কামাদার দেখাদেখি এই চাষ শুরু করি। জেলায় বিভিন্ন ব্লকে এই নিয়ে আগ্রহ আছে।”

Advertisement

বাংলার বিভিন্ন সুগন্ধি ধান নিয়ে গবেষণা করে তাদের পরিচিতি মেলে ধরার প্রকল্পের মুখ্য বিজ্ঞানী, বিসিকেভি-র মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ বলেন, “নোনা জল ঢোকার পরে মাটির উর্বরতা বাড়াতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা লাগে। কৃষি-জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খায়, এমন ফসল ফলানো দরকার। সেই সঙ্গে রোজকার ভাতের জন্য উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের পাশাপাশি ভারসাম্য রাখতে দেশি ধানের চাষও জরুরি। গোবিন্দভোগ, তুলাইপাঞ্জির মতো হরিণখুরির ক্ষেত্রেও বিপণনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু শৌখিন রান্নায় সাংস্কৃতিক গরিমা রক্ষার জন্য নয়, জীবনযুদ্ধেও এই চাল জরুরি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement