গলসির ঝাড়ুল গ্রামে স্থানীয়দের বিক্ষোভ তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে। —নিজস্ব চিত্র
‘কাটমানি’ নেওয়া, তোলাবাজির অভিযোগে তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুর, ঘেরাও অব্যাহত। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোলাবাজির টাকা ফেরাতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরে, বৃহস্পতিবারেও এমন নানা কাণ্ড ঘটেছে রাজ্যে।
পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য উপভোক্তাদের কাছ থেকে হাজার দশেক করে টাকা নেওয়ায় অভিযুক্ত পারাজ পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য গোরাচাঁদ মাঝি। এ দিন ঝাড়ুল গ্রামে তাঁর বাড়িতে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ঢিল-পাটকেল ছোড়েন, ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের গলসি ১ ব্লক সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘‘গ্রামে অশান্তি পাকাচ্ছে বিজেপি।’’ যদিও বিজেপির দাবি, এটা ওই গ্রামের মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
একই প্রকল্পে বাড়ি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগেই এ দিন বীরভূমের সাঁইথিয়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের যুব সভাপতি কৃষ্ণগোপাল দাসের বাড়ি ঘেরাও করেন স্থানীয়েরা। কৃষ্ণগোপালের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মানস সিংহের দাবি, ‘‘এটা বিজেপির চক্রান্ত।’’ একই ধরনের অভিযোগে বিক্ষোভ হয় কোচবিহারের তুফানগঞ্জে।
মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পুর-এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এমদাদুল মহলদারের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তাঁর নামে প্রথম কিস্তির টাকা ব্যাঙ্কে এলেও চেকে সই করিয়ে সে টাকা তুলে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর। কাউন্সিলর অভিযোগ মানেননি। পুরপ্রধান সুবল সাহা বলেছেন, ‘‘দেখি, খোঁজ নেব।’’ নদিয়ার ফুলিয়ায় তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে জমির পাট্টা পাইয়ে দেওয়ার নামে করে টাকা নেওয়ার অভিযোগে শান্তিপুর ব্লক অফিসে ধর্নায় বসেন এক ভাঙা জিনিসপত্রের কারবারি। অভিযোগ মানেননি প্রধান।
আসানসোলে বাস মালিকদের একাংশ অভিযোগ করেন, আইএনটিটিইউসি-র নাম করে এক দল লোক রসিদ ছাপিয়ে বাসকর্মীদের কাছ থেকে তোলা নিচ্ছে। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা চেয়ারম্যান ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’ জলপাইগুড়ি জেলা যুব তৃণমূলের বর্ধিত জেলা কমিটির সভায় এ দিন বিভিন্ন ব্লকের সভাপতিরা অভিযোগ করেন, দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা তোলা তোলেন এবং ‘কাটমানি’ নেন। জেলা যুব সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘সব অভিযোগ নোট করে নেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন নেতাদের সব জানানো হবে।’’ পক্ষান্তরে, আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা দাবি করেছেন, কাটমানি নেওয়া ও তোলাবাজিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের তালিকা তৈরি করে তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠাবেন। যাতে ভবিষ্যতে অভিযুক্তদের দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য-নেতারা সতর্ক থাকেন।