রক্তাক্ত: নার্সিংয়ে রেজিস্ট্রেশন থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ-তালিকায় নাম না-থাকায় চাকরিপ্রার্থীরা মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখান স্বাস্থ্য ভবনে। তখনই পুলিেশর সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জখম হন এক আন্দোলনকারী। নিজস্ব চিত্র
নার্সিং-পদে ওবিসি-বি শ্রেণির ২৮৫ জনের নামের মেধা-তালিকা সুপারিশ করে হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড ফেব্রুয়ারিতেই স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সেই শ্রেণির প্রার্থীরাই মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার সদর কার্যালয়ের মূল প্রবেশপথ আটকে বিক্ষোভ-অবস্থান করলেন। ওই প্রার্থীদের অভিযোগ, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের নাম নিয়োগ-তালিকায় নেই। বিক্ষোভ এক সময় এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, পুলিশের সঙ্গে প্রার্থীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। ঝরে রক্তও।
দুপুরে স্বাস্থ্য ভবনের মূল প্রবেশ পথ আটকে বসে পড়েন দার্জিলিং, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অন্তত ৩০০ নার্স-পদপ্রার্থী। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, ১৫ এবং ১৬ জানুয়ারি ওবিসি-বি তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের ইন্টারভিউ হয়। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে নিয়োগ সংক্রান্ত যে-দু’টি তালিকা বেরিয়েছে, তাতে ওবিসি-বি শ্রেণির প্রার্থীদের একটি বড় অংশের নাম নেই। আন্দোলনকারী এক প্রার্থী বলেন, ‘‘প্রকাশিত দু’টি তালিকায় এমন অনেকে আছেন, যাঁদের রেজিস্ট্রেশন নেই। অথচ রেজিস্ট্রেশন থাকা সত্ত্বেও আমরা সুযোগ পেলাম না। তা হলে কি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত কোনও ত্রুটি রয়েছে? তালিকায় একই প্রার্থীর দু’বার নামও আছে।’’ অন্য এক আন্দোলনকারীর কথায়, ‘‘একই কলেজে পড়ি। পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি বলে সাপ্লিমেন্টারি দেবে, এমন প্রার্থীও চাকরি পেয়ে গিয়েছে। যোগ্যতার মাপকাঠিতে আমার নম্বর বেশি। অথচ আমার নাম তালিকায় নেই!’’
অবস্থান-বিক্ষোভের জেরে স্বাস্থ্য ভবনে ঢোকা-বেরোনো বন্ধ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তখনকার মতো তাঁদের শান্ত করেন। বিক্ষোভকারীদের এক দল প্রতিনিধিকে কথা বলার জন্য ডেকে নেন তিনি। প্রতিনিধিদলের কাছে আবেদনকারীদের নাম, রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর-সহ তালিকা চাওয়া হয়। এরই মধ্যে পুলিশ অবস্থান তুলতে গেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। এক আন্দোলনকারীর হাতের আঙুল কেটে রক্ত বেরোতে থাকে। পুলিশ জানায়, অনুরোধের পরেও আন্দোলনকারীরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, নিয়ম মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ হয়েছে। ক’জন নার্স নেওয়া যেতে পারে, তা হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকে জানানো হয়েছিল। চাকরির নিয়মাবলি মেনে পরীক্ষার পরে ওই বোর্ড যোগ্য প্রার্থীদের নামের যে-তালিকা সুপারিশ করেছিল, তা প্রকাশ করা হয়েছে। শূন্য পদ পূরণের জন্য যে-বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তাতে একই প্রার্থী একাধিক বার আবেদন করায় অনেকের নাম দু’বার বেরিয়েছে। নিয়ম মেনে সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। কোনও কোনও শিবির থেকে আন্দোলনকারীদের বিভ্রান্ত করা হয়ে থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
‘‘আন্দোলনকারীরা সবটা ঠিক বলছেন না। ওবিসি-বি-র তালিকা বেরিয়েছে। সকলের চাকরি কখনওই হয় না। তবে এখনও
আমাদের বেশ কিছু পদ খালি আছে। সেগুলিতে ক’জনকে নেওয়া যায় দেখছি,’’ বলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী।