আগের দিনই তৃণমূলের মন্ত্রী ও সাংসদের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের বর্ধমান জেলা সম্পাদক হিরণ্ময় ঠাকুর। তাঁর আক্ষেপ, কী সিপিএম, কী তৃণমূল, সকলেই তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে, তাতে মতুয়াদের লাভ কিছু হয়নি।
কিন্তু পরের দিন, বৃহস্পতিবার তৃণমূলকে আড়াল করে ক্ষোভের জন্য ঠাকুরবাড়িতে তাঁর বিরোধী পক্ষকেই দায়ী করলেন সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি ও বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। তবে তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের (বিজেপিতে গিয়েও এখন যিনি তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করছেন) নাম তিনি সরাসরি করেননি।
বুধবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে মতুয়া জেলা সম্মেলনে হিরণ্ময় ঠাকুর বলেন, ‘‘সিপিএম সরকারও আমাদের ব্যবহার করেছে। এই সরকারও তাই করছে। আমরা প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছি না।’’ মমতাবালা ছাড়াও রাজ্যের মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমানের পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত, বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিক প্রমুখ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার মমতাবালা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ওঁরা বিক্ষুব্ধ হয়েই রয়েছেন। কারণ, তৃণমূল সরকার মতুয়া ঠাকুরবাড়ির উন্নয়নের জন্য টাকাপয়সা দিয়েছিল, এখানে তখন যিনি মন্ত্রী ছিলেন উন্নয়নে তাঁর হাত পড়েনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ঠাকুরবাড়িতে তৃণমূল উন্নয়ন করেনি, এটা আমরা বলতেই পারি না। পিআর ঠাকুর কলেজ মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের জন্যই করেছেন। ঠাকুরনগর রেলস্টেশনকে ঠাকুরবাড়ির মন্দিরের আদলে তৈরি করেছেন। কিন্তু ঠাকুরবাড়ির উন্নয়নে তৃণমূলের সাংসদদের দেওয়া টাকা সঠিক ভাবে খরচ হয়নি। তার তদন্ত হওয়া উচিত, যা নিয়ে মতুয়াদের ক্ষোভ আছে।’’
প্রশ্নটা অবশ্য শুধু ঠাকুরবাড়ি নিয়ে ছিল না। বর্ধমান জেলায় ১৩ লক্ষ মতুয়া রয়েছেন। এর মধ্যে জাতিগত শংসাপত্র পাননি প্রায় ৪ লক্ষ। সংগঠনের দাবি, প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের আগেকার দলিল জমা দিতে হবে। কিন্তু বন্যা বা অন্য কোনও কারণে বেশির ভাগে কাছেই তা নেই। তাঁদের অভিযোগ, ১৯৭১ সালের পর থেকে কোনও পাট্টা বিলি করা হয়নি। তাঁর আগেও যাঁরা পেয়েছেন, সেগুলিরও রেকর্ড নেই।
সম্মেলনে হিরণ্ময়বাবু বলেন, ‘‘আমি রাজনৈতিক ভাবে কিছু বলছি না, শুধু জেলার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের অসুবিধার কথা সাংসদের কাছে তুলে ধরছি।’’ ওই সভাতেই মমতাবালা বলেছিলেন, ‘‘উদ্বাস্তু এলাকাগুলিতে পাট্টা বিলির কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে দাবি করা হয়েছে। ব্লকগুলিতে জাতিগত শংসাপত্রও পাওয়া যাচ্ছে না।’’ মতুয়াদের শিক্ষা ও পরিবেশগত কিছু সমস্যা রয়েছে বলেও তিনি আক্ষেপ করেন।
এ দিন উন্নয়ন না হওয়ার প্রশ্নে মমতাবালা এক প্রাক্তন মন্ত্রীকে দায়ী করায় প্রশ্ন ওঠে, তিনি কি তাঁর দেওর, প্রাক্তন উদ্বাস্তু পুনর্বাসন মন্ত্রী মঞ্জুল ঠাকুরকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছেন। মমতাবালা বলেন, ‘‘আমি সরাসরি কারও নাম করতে চাই না। আপনারা বুঝে নিন।’’ বর্ধমানের ঘটনার পিছনে মঞ্জুলবাবুর হাত রয়েছে কি না, তা নিয়েও তিনি কিছু বলতে চাননি। হিরণ্ময়বাবুর অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে। মমতাবালার মতে, ‘‘আমরা সকলে ঠাকুরের ভক্ত হলেও এক দল তো করি না। রাজনৈতিক কারণ থাকতেই পারে।’’
এই সুযোগে বিজেপি সরকারকে বিঁধতেও ছাড়েননি মমতাবালা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত উদ্বাস্তু হিন্দুদের (যার মধ্যে মতুয়ারাও পড়েন) নাগরিকত্বের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের জাতিগত শংসাপত্র দিচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে টাকা দিয়েছেন তা যদি সঠিক ভাবে খরচ হত, মতুয়াদের আনন্দের সীমা থাকত না।’’ মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।