হাসপাতালে ভরতকে দেখতে এসেছেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।
অন্তত দেড় ঘণ্টা মাটির নীচে চাপা পড়েছিলেন তিনি। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধারের প্রায় এক ঘণ্টা পরে হুঁশ ফিরেছিল। পর দিনও বেশ কয়েকবার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন। তিন দিন পরেও কাঁধ থেকে পিঠ পর্যন্ত কালশিটের দাগ স্পষ্ট। কালশিটে রয়েছে কপালেও। শনিবার হাসপাতালের বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় সত্তর বছরের ভরত রানা বললেন, ‘‘যখন ক্রমশ মাটির নীচে চাপা পড়ছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, আর বাঁচব না। নতুন জীবন পেয়েছি। এখন মনে হচ্ছে অনেকদিন বাঁচব। তবে সবার আগে বাড়িটা আবার তৈরি করতে হবে।’’
মিরিকের টিংলিঙের লিম্বুগ্রামের বাসিন্দা ভরতবাবু চা বাগানের প্রাক্তন কর্মী। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ধসে তাঁদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। রাত তিনটে নাগাদ ধস নেমেছিল বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পরিবারের সদস্যদের দাবি, গত বুধবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ সেই ধস সরিয়েই ভরতবাবুকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গত বুধবার থেকেই মিরিক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ভরতবাবু। শনিবার মিরিক হাসপাতালে গিয়ে ভরতবাবুর সঙ্গে দেখা করেছেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। অশোকবাবু সহ দার্জিলিং জেলা সিপিএমের এক প্রতিনিধি দল মিরিকের ধস বিধ্বস্ত এলাকায় গিয়েছিলেন। মাটির নীচে দেড় ঘণ্টা চাপা পড়েছিলেন শুনে অশোকবাবু, দার্জিলিং জেলা সিপিএম সম্পাদক জীবেশ সরকাররা বিস্মিত হয়েছেন।
ভরতবাবু জানিয়েছেন, তুমুল বৃষ্টি চলতে থাকায় মঙ্গলবার রাত বারোটা নাগাদই ঘুম ভেঙে বাড়ির উঠোনে চলে এসেছিলেন। কিছু ক্ষণ পরপর টর্চ জ্বেলে চারদিক দেখছিলেনও। বাড়ির ভিতরে ছিলেন স্ত্রী রেবতীদেবী ছোট ছেলের স্ত্রী বোদাদেবী এবং এবং সাড়ে ৪ বছরের নাতি অনীশ। ভরতবাবুর তিন ছেলের সকলেই ঘটনার রাতে মিরিকের বাড়িতে ছিলেন। ভরতবাবু বলেন, ‘‘হঠাৎ অনেক উঁচু থেকে গুমগুম শব্দ শুনতে পাই। চারদিক থেকে ঝুরঝুর করে মাটি পাথর পড়তে দেখি। চিৎকার করে বাড়ির সকলকে বাইরে আসতে বলি।’’
ভরতবাবু জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী রেবতীদেবী বাইরে আসতে গিয়ে পা হড়কে পড়ে যান। ভরতবাবু বলেন, ‘‘স্ত্রীকে ওঠানোর জন্য এগোতে শুরু করেছি, তখনই হঠাৎই কাঁধে একটি মাটির দলা এসে পড়ে। আমি উপুড় হয়ে পড়ে যাই। পিঠের মধ্যে ক্রমাগত পাথর, মাটি পড়তে থাকে। উঠতে যাব তখন হঠাৎ বৃষ্টির মতো মাটি পড়তে থাকে। মাথা তুলতে পারছিলাম না। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আর কিছু মনে নেই।’’
এলাকার বাসিন্দা প্রভা থাপা, দিবস প্রধানরা জানিয়েছেন, ভোর বেলায় বাসিন্দারা হাত লাগিয়ে ধস সরিয়ে ভরতবাবুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘরের ভিতরে থাকা ভরতবাবুর পুত্রবধূ বোদাদেবী বাইরে চিৎকার শুনে ঘরের ভিতর থাকা ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। তত ক্ষণে ধসে তাঁদের বাড়ির একাংশ চাপা পড়ে গিয়েছে। বোদাদেবী বলেন, ‘‘চিৎকার শুনেই ঘুমন্ত ছেলেকে টেনে নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে বাইরে আসি। বেরিয়ে দেখি বাড়ির সামনের অংশ চাপা পড়ে গিয়েছে।’’
ভরতবাবুর বড় ছেলের স্ত্রী দময়ন্তীদেবী এ দিন হাসপাতালেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম বাবা বেঁচে নেই। ওঁর সারা শরীরে এখনও চোট আঘাত রয়েছে।’’ হাসপাতালের চিকিৎসক টি লামা বলেন, ‘‘বড় কোনও পাথরের আঘাত লাগেনি তাই রক্ষে। তবে শরীরের যথেষ্ট চোট লেগেছে।’’