শান্তিপুর, রানাঘাট, কল্যাণীর হাসপাতাল ছুঁয়ে মাঝ রাতে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। প্রায় দশ ঘণ্টা ধরে ক্ষতবিক্ষত কিশোরকে নিয়ে ছোটাছুটির পরেও সোমবার রাতে, এনআরএসের চিকিৎসকেরা নির্বিকার মুখে জানিয়েছিলেন, ‘বেড নেই, বললাম তো নিয়ে যান’।
ট্রাকের ধাক্কায় হাত-পাঁজর গুঁড়িয়ে গিয়েছে, রক্তক্ষরণে ফুলিয়ার নবীন দাস নামে প্রতিবন্ধী কিশোর ততক্ষণে নেতিয়ে পড়েছে। সোমবার রাতে, এনআরএস-ও ফিরিয়ে দেওয়ায়, অচেতন ছেলেকে নিয়ে বাড়ির লোক তাই ফিরে গিয়েছিলেন ফুলিয়ার কালীপুর গ্রামে। খবরটা ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেন গ্রামের বাসিন্দারা। মুর্শিদাবাদ যাওয়ার পথে সেই অবরোধে থমকে যায় খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গাড়ি। ভিড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে আহত ছেলেটিকে তিনিই ফের পাঠান এসএসকেএম হাসপাতালে। মন্ত্রী বলছেন, ‘‘অবরোধ কেন, খোঁজ নিতে গিয়েই ব্যাপারটা জানতে পারি। আমি এসএসকেএমের সুপারকে একটা চিঠি লিখে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, সেখানে না হলে পাশেই শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল, সেখানে যেন ভর্তি করানো হয়, কোনও মতেই যেন ফিরিয়ে দেওয়া না হয়।’’ শুধু তাই নয়, নিতান্তই দিন আনি দিন খাই অবস্থা, নবীনের বাবা টগরের হাতে যাতায়াতের খরচ বাবদ তুলে দিয়েছিলেন কিছু টাকাও। ব্যবস্থা করেছিলেন বিধায়ক আবাসে থাকার।
এ দিন সকালে, ছেলেকে নিয়ে এসএসকেএমে এসেও অবশ্য সুপারের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি টগর দাস। তিনি বলছেন, ‘‘লম্বা লাইন, ঘরে ঢুকতেই দিল না। ছেলে ততক্ষণে আরও নেতিয়ে পড়েছে।’’
বেপরোয়া হয়ে টগর ছুটেছিলেন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। মন্ত্রীর চিঠি দেখিয়ে সেখানেই শেষতক ভর্তি করানো হয় নবীনকে। টগর বলছেন, ‘‘ভাবতে পারেন, চব্বিশ ঘণ্টায় পাঁচটা হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি হল ছেলে!’’
আরও পড়ুন: বিশ্বাস করেই ঠকলেন মা
বেসরকারি হাসপাতালগুলির বেনিয়মের বিরুদ্ধে তৎপর হওয়ার পাশাপাশি, সরকারি হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ করার প্রবণতা বন্ধ করতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি হাসপাতালগুলো সে নির্দেশের মান্যতা দিচ্ছে না কেন ?
এনআরএস হাসপাতালের সুপার হাসি দাশগুপ্ত আকাশ থেকে পড়ছেন, ‘‘খোঁজ নেব, কেন ভর্তি করানো গেল না।।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এমন হয়ে থাকলে নিশ্চয় খতিয়ে দেখা হবে।’’ কিন্তু শান্তিপুর হাসপাতালের কোনও পদাধিকারী মন্তব্য করতে চাননি। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবদুলাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনাটা জানতামই না।’’ টগরবাবু অবশ্য জানান, প্রথম দু’টি হাসপাতালে ‘ব্যান্ডেজ’ বেঁধেই দায় এড়িয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘শান্তিপুর ও রানাঘাট হাসপাতাল ফিরিয়ে দেওয়ায় গিয়েছিলাম কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে।’’ রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ওই মেডিক্যাল কলেজ থেকেও পরামর্শ দেওয়া হয়, ‘এখুনি এনআরএসে নিয়ে যাও’। টগর বলছেন, ‘‘বড় ভরসা করে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে এনেছিলাম, ফল পেলাম হাতেনাতে!’’