জঙ্গলমহলের জনজাতি মানুষের বড় জমায়েত করতে চাইছে সিপিএম। ফাইল চিত্র।
ছাত্র ও যুব সংগঠনের আন্দোলনের গতি বেড়েছে। রাজ্য জুড়ে সাড়াও মিলছে ভাল। এ বার সিপিএমের নজর জনজাতি মনে। জল, জমি, জঙ্গলের অধিকার রক্ষার দাবিকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনজাতি আন্দোলন জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় আগামী ১৫ ও ১৬ অক্টোবর হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার রক্ষা মঞ্চের তৃতীয় রাজ্য সম্মেলন। সেই সম্মেলন উপলক্ষে ১৬ তারিখ উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি জঙ্গলমহলের জনজাতি মানুষের বড় জমায়েত করতে চাইছে সিপিএম। দলের গত পার্টি কংগ্রেসে প্রথম বার পলিটবুরোয় দলিত প্রতিনিধি হিসেবে রামচন্দ্র ডোমকে নিয়ে এবং বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেবলীনা হেমব্রমকে পাঠিয়ে বার্তা দিতে চেয়েছিল তারা। যদিও দলের কমিটিতে জাতিগত প্রতিনিধিত্বের তত্ত্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার করে না সিপিএম। নাগরাকাটার সমাবেশে রামচন্দ্র, দেবলীনাদের সঙ্গে ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এবং জনজাতি অংশের নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরীরও বক্তা হিসেবে থাকার কথা। জনজাতি আন্দোলন সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রস্তাব নেওয়া হবে ওই সম্মেলনে।
তিন বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তফসিলি জাতি ও জনজাতি অধ্যুষিত বেশ কিছু আসন জিতেছিল বিজেপি। আবার গত বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় জেলায় যত আসন বিজেপি জিততে পেরেছে, তার অধিকাংশই তফসিলি জাতি ও জনজাতি এলাকায়। গেরুয়া শিবিরের প্রভাব কাটিয়ে ওই সব এলাকায় জনজাতি মন তাঁদের দিকে ফেরানোর লড়াই জোরালো করতে চাইছেন বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য রামচন্দ্রের কথায়, ‘‘এক ধরনের সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফলে বিজেপি লাভবান হয়েছে। জনজাতিদের বোঝানো হয়েছে, তাঁরাও বৃহত্তর হিন্দুত্বের ছাতার তলায় আছেন। যদিও প্রকৃত অর্থে জনজাতিরা প্রকৃতির পূজারী। তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক বঞ্চনা কমানোর লক্ষ্যে যে সরকারি স্তরে তেমন পদক্ষেপ হয়নি, সেটা সামনে এনে পাল্টা লড়াই আমাদের কাজ।’’
সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, বন সংরক্ষণ আইন সংশোধনের নামে কেন্দ্রীয় সরকার যা করছে, তাতে শুধু প্রশাসনিক নির্দেশেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে। জনজাতিদের গ্রামসভা ডাকার প্রয়োজন থাকবে না, তাঁদের অধিকার খর্ব হবে। আবার অতিমারির সময়ে জনজাতি অংশের শিক্ষার ব্যবস্থা অনেকটা ধাক্কা খেয়েছে, তাঁরা আরও পিছিয়ে পড়ছেন। এই ধরনের সমস্যা ও অধিকারের প্রশ্নে আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক হচ্ছে। রামচন্দ্রের সংযোজন, ‘‘জমি, বাসস্থান, পরিবেশের ক্ষতি করে বীরভূমে যে খনির প্রকল্প করতে চাইছে রাজ্য সরকার, সেখানে উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনে আছেন বড় অংশের জনজাতি মানুষ। পুরুলিয়ার তিলাবনি পাহাড় ধ্বংসের চেষ্টা নিয়েও উদ্বেগে আছেন মানুষ। এই সব আন্দোলনকেই আরও বাঁধার চেষ্টা হচ্ছে।’’
সিপিএমের আর এক পলিটবুরো সদস্য ও দলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘বাংলার জনসংখ্যায় তফসিলি জাতি ও জনজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি এবং সংখ্যালঘুরা মিলে অর্ধেকের বেশি। কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে এঁরাই হলেন ৭৩%। সংগ্রামে শহিদদের তালিকায় এঁরাই থাকেন সংখ্যাগরিষ্ঠ। লুটেরা শাসকদের দু’টো দলই এঁদের মধ্যে মোরগ লড়াই বাধায়!’’ বিষয় ধরে ধরে আন্দোলনে শান দিয়ে জনজাতি মন ফেরাতে চাইছেন সূর্যবাবুরা।