শৃঙ্গজয়: আর্জেন্তিনার মাউন্ট অ্যাকাঙ্কাগুয়া শৃঙ্গে দেবব্রত ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
আর্জেন্তিনার মাউন্ট অ্যাকাঙ্কাগুয়া শৃঙ্গ জয় করে ফিরলেন শিলিগুড়ির দেবব্রত ঘোষ। ২১ জানুয়ারি শিলিগুড়ি থেকে রওনা হন তিনি। শৃঙ্গ জয় করেন ৮ ফেব্রুয়ারি। দক্ষিণ আমেরিকার ওই শৃঙ্গের উচ্চতা ৬৯৬২ মিটার। পরের লক্ষ আলাস্কার মাউন্ট ডেনালি।
বিশ্বের সাত মহাদেশের সাতটি উচ্চতম শৃঙ্গ জয় করার স্বপ্ন রয়েছে তাঁর। এই নিয়ে জয় করেছেন তিনটি। মাউন্ট অ্যাকাঙ্কাগুয়া ছাড়া বাকি দু’টি ইউরোপের এলব্রুস এবং আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো। স্বপ্ন পূরণে এখনও বাকি চারটি।
অথচ এ ধরনের অভিযানে স্পনসর না মেলা সেই লক্ষ পূরণের পথে বড় বাধা হতে চলেছে বলে চিন্তায় পড়েছেন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের সদস্য দেবব্রত। এখনও পর্যন্ত তিনটি শৃঙ্গ অভিযানে বেশিরভাগ টাকাটাই তাঁর নিজের। খরচ হয়েছে অন্তত দশ লক্ষ টাকা।
এনএইচপিসি’র কাজের সাধারণ ঠিকাদার দেবব্রত বলেন, ‘‘স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে ওই রোজগারেই চলতে হয়। সেখান থেকে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য অর্থ খরচ করতেও পরিবারকে নানা ভাবে বোঝাতে হয়। সব সময় হয়ে ওঠে না।’’ স্পনসররা এগিয়ে এলে কাজটা অনেক সহজ হবে বলে তাঁর আশা।
শিলিগুড়ির বাঘা যতীন কলোনির বাসিন্দা দেবব্রত ১৯৯৫ সালে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সস্টিটিউট থেকে বেসিক কোর্স করেন। ২০১৫ সালের মধ্যে পর্বতারোহণের অ্যা়ডভান্স কোর্স-সহ আরও বেশকিছু প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৬ সালে ঠিক করেন বিশ্বের সাতটি উচ্চতম শৃঙ্গ জয় করবেন। সেই লক্ষে ওই বছরেই জয় করেন এলব্রুস শৃঙ্গ। পরের বছরই কিলিমাঞ্জারো। তবে তিনটির মধ্যে চ্যালেঞ্জের দিক থেকে এগিয়ে রাখতে চান অ্যাকাঙ্কাগুয়া জয়কেই।
সদ্য অভিযান থেকে ফেরা দেবব্রত জানান, প্রশান্ত মহাসাগরের মাইনাস ৩০-৪০ ডিগ্রি শৈত্য প্রবাহ এবং প্রবল হাওয়ার মধ্যে অ্যাকাঙ্কাগুয়া ছোঁয়ার লড়াইটা কঠিন ছিল। প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে এই অভিযানে। বাগডোগরা থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লিতে যান। সেখান থেকে উড়ানে বুয়েনস আইরাস পৌঁছন ২৩ জানুয়ারি। মেনডোজা গিয়ে অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হয়। তারা ৬ সদস্যের দল ছিলেন। ২৮ জানুয়ারি হরকনস থেকে পাহাড়ে চড়া শুরু। বেস ক্যাম্প প্লাজা দ্যা মুলাসে পৌঁছন ৩১ জানুয়ারি। শৃঙ্গে পৌঁছনর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ ক্যাম্প ছিল ৫৯৫০ মিটার উচ্চতায়। দেবব্রত জানান, মাইনাস চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে ৮০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছিল। তার মধ্যে দিয়ে ১০ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে বেলা পৌনে চারটে নাগাদ শৃঙ্গে ওঠেন। দলের আরও তিন জন ছিলেন কলকাতার দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, মুম্বইয়ের প্রিয়াঙ্ক বাদোলা এবং ক্যালিফর্নিয়ার ভূমিকা জৈন। বাকি দু’জন শেষ ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরুর এক ঘণ্টা পরেই ফিরে যান। ন্যাফের কর্মকর্তা শঙ্কর মজুমদার, অমল বসাকরা জানান, এই শৃঙ্গ জয়ের পর স্পনসররা দেবব্রতর স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসুক এটাই তাঁরা চান।