ঝাড়গ্রামে যুব তৃণমূলের সভায় দীনেন রায়। নিজস্ব চিত্র।
‘সংবাদপত্র পড়বেন না। টিভির খবর দেখবেন না। এলাকা থেকে বিরোধীদের উত্খাত করুন। নিয়মিত মিটিং-মিছিল করুন।’ জঙ্গলমহলের ‘হাসি’ ধরে রাখার জন্য প্রকাশ্য জনসভায় এমনই দাওয়াই বাতলে দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের নেতারা।
জঙ্গলমহলে কেবলমাত্র তৃণমূল-রাজ জারি থাকবে বলে জানানো হল সভায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্ক লাগোয়া ছোট মাঠে মহকুমা যুব তৃণমূলের ডাকে এক জনসভায় শাসক দলের এক ঝাঁক শীর্ষনেতা, মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন। সভায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের দাবি, “আমাদের সভা শেষের মুখে লোকজন যখন চলে যেতে থাকেন, ওই সময় ফাঁকা মাঠের ছবি দেখিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশ প্রচার করে আমাদের সভায় লোক হচ্ছে না। ঠিক এইভাবেই ওরা রাজ্যস্তরে ‘শিলিগুড়ি মডেল’, আর জঙ্গলমহলে ‘মৌলাড়া মডেল’ প্রচার করছে। কিন্তু জঙ্গলমহলে যে ‘দহিজুড়ি মডেল’, ‘সাঁকরাইল মডেল’ কিংবা ‘গোপীবল্লভপুর মডেল’-এ কীভাবে আমরা জিতেছি, সে কথা প্রচার করা হচ্ছে না।”
দীনেনবাবু ‘তথ্যে ভরা’ কাগজ হাতে নিয়ে পড়ে শোনাতে থাকেন, জঙ্গলমহলের উপনির্বাচনে কোন কোন আসনে তাঁরা কত বেশি ভোটের ব্যবধানে সিপিএমকে ল্যাজে-গোবরে হারিয়েছেন। আর লালগড়ের নেপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের মৌলাড়া আসনে গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী আড়াইশো ভোটে হেরেছিলেন জানিয়ে দীনেনবাবু বলেন, “এ বার আমাদের পরাজয়ের ব্যবধান মাত্র ৫৭ টা ভোট। অথচ সেটাই ফলাও করে প্রচার করে বলা হচ্ছে, আমরা নাকি অশনি সংকেত দেখছি। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্যই মানুষকে আমরা প্রকৃত সত্যটা সভার মাধ্যমে জানাচ্ছি।”
গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো জনতার উদ্দেশে বলেন, “আপনারা সংবাদপত্র পড়বেন না, টিভির খবর দেখবেন না। সংবাদমাধ্যমের একাংশ সিপিএম-সহ বিরোধীদের হয়ে একচেটিয়া মিথ্যা প্রচার করছে।”
যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, “বিরোধীরা ফের সভা-সম্মেলন করছে। ওরা উন্নয়ন ধ্বংস করতে চাইছে। জঙ্গলমহলের শান্তি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে ধরে রাখতে হলে সিপিএমের মতো ডাকাত-খুনিদের রাজনীতি করতে দেবেন না।”
জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ সভায় ঘোষণা করেন, মুখ্যমন্ত্রী ২৭ তারিখ জঙ্গলমহলে আসছেন। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলবাসীকে উন্নয়ন ও শান্তি দিয়েছেন। আর সেই শান্তিকে যারা ধ্বংস করার অপচেষ্টা করছে, জঙ্গলমহলে তাদের কোনও স্থান নেই। কেবল তৃণমূল আর যুব তৃণমূল এখানে রাজ করবে।” বিজেপি ও কংগ্রেসকেও এক হাত নেন প্রদ্যোত্বাবুরা। সভায় বক্তৃতা দেন আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু, তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম শহর সভাপতি প্রশান্ত রায়, প্রমুখ।
পুলিশের হিসেবে সভায় লোক হয়েছিল হাজার দশেক। তবে দীনেনবাবুর বক্তৃতার পরে সভার মাঝ পথে লোকজন উঠতে শুরু করেন। অনেকেই হাটবাজারের দিকে চলে যান। লোকজকে আটকানো চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তৃণমূল কর্মীরা। এ ব্যাপারে বক্তৃতা দেওয়ার সময় মঞ্চ থেকে উষ্মা প্রকাশ করেন জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্বাবু।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলে ফের সক্রিয় হচ্ছে মাওবাদীরা। শাসক দলের বিক্ষুব্ধ অংশকে মাওবাদীরা ব্যবহার করার চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে লালগড়ের নেপুরা পঞ্চায়েতের মৌলাড়া আসনে শাসকদলের যাবতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে তৃণমূল প্রার্থীর পরাজয় ভাবিয়ে তুলেছে দীনেনবাবুদের। এসব কারণে জঙ্গলমহল জুড়ে নিরন্তর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। এ দিন কর্মসূচি ঘোষণা করে জানানো হয়, পুজোর পরে নয়াগ্রাম থেকে বেলপাহাড়ি দীর্ঘ রাস্তায় শান্তি পদযাত্রা করা হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ব্লকে নিরন্তর মিটিং-মিছিল চলবে।