• কেউ খুল্লামখুল্লা বিজ্ঞাপন দিয়ে বলছে, ‘এমবিবিএস-এ কলকাতা, দুর্গাপুর, হলদিয়ায় নিশ্চিত ভর্তির সুযোগ! আগে এলে আগে ভর্তি!’
• কেউ আবার নিট-এ কত নম্বর পেলে কোন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করতে কত লক্ষ টাকা নেবে, তার সবিস্তার বিবরণ দিচ্ছে বিজ্ঞাপনে!
• আবার কেউ কেউ সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দাবি করছে, ‘নিট উতরোতে না-পারলেও ফল হাতে পাওয়ার আগেই পছন্দের মেডিক্যাল কলেজে আসন নিশ্চিত করে ফেলুন!’
‘নিট’ মানে ডাক্তারিতে ভর্তির সর্বভারতীয় অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা। বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে দেদার টাকার খেলায় রাশ টানতেই নিটের মাধ্যমে ডাক্তারিতে ভর্তির ব্যবস্থা চালু হয়েছে। শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, কোনও রাজ্যই আর আলাদা মেডিক্যাল প্রবেশিকার বন্দোবস্ত করতে পারবে না। ডাক্তারি পড়তে হলে বসতেই হবে নিটে। তার পরেই ঠিক হয়, নিটে নির্দিষ্ট নম্বর না-পেলে সরকারি বা বেসরকারি, কোনও মেডিক্যাল কলেজেই ডাক পাওয়া যাবে না কাউন্সেলিংয়ে।
কিন্তু নিট চালু হওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতি যে আদৌ বদলায়নি, কয়েক সপ্তাহ ধরে বিজ্ঞাপনের বন্যাতেই তা পরিষ্কার। সংবাদপত্র, পত্রপত্রিকার পাতা থেকে শুরু করে রাস্তার ধারে, ট্রেন-বাসের দেওয়াল— সর্বত্র এখন এই ধরনের বিজ্ঞাপন। মেডিক্যাল শিক্ষক ও পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, এক শ্রেণির বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে এই সব বিজ্ঞাপনদাতা সংস্থার যোগসাজশ রয়েছে। কলেজগুলির এজেন্ট হিসেবেই ওরা কমিশন নিয়ে কাজ করে। আবার অভিভাবকদের কাছ থেকেও টাকা নেয়। যদিও পুলিশের একটা অংশের বক্তব্য, কারও সঙ্গেই এই সব সংস্থার যোগ নেই। সংস্থাগুলি ভুয়ো। কিছু বেসরকারি কলেজের নাম করে তারা স্রেফ জালিয়াতি করে। এবং টাকা হাতিয়ে গা-ঢাকা দেয়।
প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের ভুয়ো সংস্থা মেডিক্যালে ভর্তি করানোর টোপ দিয়ে প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে কী ভাবে? সব জেনেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় কেন? তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাই বা করছে না কেন? এমন অভিযোগও উঠছে যে, পুলিশেরও একাংশের সঙ্গে এই ধরনের সংস্থার যোগসাজশ রয়েছে। তাই সংস্থাগুলি এতটা সাহস দেখাতে পারে।
অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের দাবি, এই রকম বিজ্ঞাপন নজরে এলে তারা ব্যবস্থা নেয়। তা হলে সদ্য বিজ্ঞাপন দেওয়া সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? এক পুলিশকর্তার জবাব, ‘‘অনেক সময়েই বিজ্ঞাপন আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। তবে বিজ্ঞাপন মানেই তো নানা রকম
প্রতিশ্রুতি। কেউ ফর্সা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আর কেউ মেডিক্যালে ভর্তি করানোর। তা হলে তো কথায় কথায় সকলকে গ্রেফতার করতে হয়! মানুষকেও তো সচেতন হতে হবে।’’
পুলিশের অনুযোগ, বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে অনেক অভিভাবক ভুঁইফোঁড় সংস্থা সম্পর্কে ভাল করে খোঁজখবর না-নিয়ে নথিপত্র ছাড়াই নগদ টাকা দিয়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি যে-সব নথিপত্র দেয়, তার সবই ভুয়ো, এমনকী ঠিকানাটাও। ফলে তদন্তে নেমে গোয়েন্দাদের পক্ষে প্রতারকদের চিহ্নিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। গত সোমবার এই ধরনের একটি বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে যাদবপুর থানা ও লালবাজার গোয়েন্দা দফতরে অভিযোগ দায়ের করেছেন কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পরেও বিজ্ঞাপনগুলি যথারীতি প্রকাশিত হয়েই চলেছে!
(চলবে)