শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যায় চলছে মন্ত্রী-আধিকারিকদের সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক। ছবি: সন্দীপ পাল
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। নির্দেশ পূরণ করতে উত্তরবঙ্গ থেকে নির্বাচিত সব মন্ত্রীর দফতর এবং সরকারি সংস্থাকে পনেরো দিন অন্তর চলতে থাকা কাজের খতিয়ান দাখিল করতে হবে। উত্তরবঙ্গের মন্ত্রী-সংস্থার চেয়ারম্যানদের নিয়ে তৈরি কমিটির কাছেই পেশ করতে হবে রিপোর্ট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তৈরি হয়েছে কমিটি। উত্তরবঙ্গের সব মন্ত্রী, এসজেডিএ, এনবিএসটিসির মতো সরকারি সংস্থার চেয়ারম্যানরা রয়েছেন সমন্বয় কমিটিতে। শনিবার ওই কমিটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ বৈঠক ছিল।
এর আগে পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস উত্তরকন্যায় এসে কমিটি গড়ে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। এ দিনও উত্তরকন্যায় বৈঠক হয়েছে। প্রথম দিনেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, সিঙ্গুরের পথ অনুসরণ করে শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে অনিচ্ছুকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। শিলিগুড়ি শহরকে যানজট মুক্ত করতেও বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়ে পদক্ষেপ হবে বলে স্থির হয়েছে। আগামী বৈঠকে সব দফতর রিপোর্ট দেওয়ার পরে জেলাওয়াড়ি প্রকল্প ধরে আলোচনা হবে।
শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসকে আর্ন্তজাতিক মানের গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের হাতে থাকা জমিতে টার্মিনাস তৈরি হবে বলে এ দিন সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর-এসজেডিএ যৌথ ভাবে প্রকল্পে কাজ করবে।
দার্জিলিং, গ্যাংটক, পেলিং, সহ পাহাড়ি বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার ছোট গাড়ির স্ট্যান্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হিলকার্ট রোড, সেবক রোডে। যার জেরে চলতে থাকে যানজট এবং দুর্ভোগও। তাই ছোট গাড়ির স্ট্যান্ডও শহরে রাখা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একা কোনও দফতরের পক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয় বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। নতুন কোথায় স্ট্যান্ড হবে, শহরে থাকা বর্তমান স্ট্যান্ড সরানো হবে কী উপানে এমন নানা প্রশ্ন ছিল। এ দিনের সমন্বয় বৈঠকে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকেও ডাকা হয়। স্থির হয়, শহর লাগোয়া কোনও এলাকায় এসজেডিএ-এর তরফে জায়গা খুঁজে নতুন গাড়ির স্ট্যান্ড তৈরি হবে। সাহায্য করবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। পুলিশকেও এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘সব দফতরের প্রতিনিধিরা থাকলে অনেক কম সময়ে সহজেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী এটাই চাইছেন।’’
এ দিন প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন দফতরের কাজ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। সমন্বয় কমিটির নাম রাখা হয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি। গৌতমবাবু ছাড়াও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জেমস কুজুর, বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন, প্রতিমন্ত্রী গোলাম রবান্নি, বাচ্চু হাঁসদা, এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী, এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান মিহির গোস্বামীরা ছিলেন। সব দফতর এবং সংস্থার বর্তমান কী কী কাজ চলছে তার খতিয়ান এ দিন কমিটির কাছে রাখা হয়। কবের মধ্যে সেই প্রকল্পগুলি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, কত কাজ বাকি রয়েছে তার রিপোর্টও দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসের প্রথম এবং তৃতীয় শনিবার কমিটির বৈঠক হবে। সব বৈঠকেই প্রকল্পগুলির অগ্রগতি জানাতে হবে দফতর এবং সংস্থাগুলিকে। সেগুলি যাচাই করে দেখবে অন্য দফতরের মন্ত্রা-কর্তারাও।
শুধু হাতে থাকা কাজের খতিয়ান নয়, নতুন প্রকল্প শুরু করার আগেও পরিকল্পনা কমিটির কাছে পেশ করতে হবে। উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন জেলার বৈষ্যমের অভিযোগও সামাল দেওয়া যাবে। আগামীতে সেচ, পূর্ত, কৃষির মতো কিছু দফতরের শীর্ষস্তরের আধিকারিকদেরও কমিটির সদস্য করার প্রস্তাব পাঠানো হবে নবান্নতে বলে সিদ্ধান্ত। সমন্বয় কমিটি গঠন নিয়ে সরকারি ভাবে যাই দাবি থাক না কেন, প্রশসানের আধিকারিকদের একাংশের দাবি স্বচ্ছতা আনতেই মুখ্যমন্ত্রীর কমিটি ওষুধ প্রয়োগ করেছেন।
রাজ্যে তৃণমূল সরকারের প্রথম ইনিংসে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন দফতর-সংস্থা-পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। কোনও সংস্থায় একশো কোটিরও বেশি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, কাজ শেষ না করেই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার ঘটনা তদন্তে অঠে আসে। কোনও দফতর-সংস্থায়-পুরসভায় বরাত পাওয়া নিয়ে সিন্ডিকেট রাজের অভিযোগ ওঠে। কোন দফতরের মন্ত্রী অথবা সংস্থার চেয়ারম্যানের এলাকাতেই কাজের বেশিরভাগ বরাদ্দ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন শাসক দলের নেতা-জনপ্রতিনিধিরাই। কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল বেশ কিছু ক্ষেত্রে। এই সব অভিযোগের পুনরাবৃত্তি এড়াতেই নবান্ন থেকে সমন্বয় কমিটি গড়ে মাসে দু’বার বৈঠকের নির্দেশ এসেছে বলে দাবি। যার জেরে উত্তরের মন্ত্রী-কর্তারা নিজেরাই একই সঙ্গে পরীক্ষক আবার পরীক্ষার্থীও।