ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে গায়ের ঝাল মেটেনি। অ্যাসিড ঢেলে মুখ পুড়িয়ে দেওয়া হয় স্বপন ভৌমিকের। পরে জানা যায়, মানসিক কিছুটা সমস্যা আছে সোনারপুরের স্বপনের। পথ ভুলে ডায়মন্ড হারবারে চলে এসেছিলেন কয়েক দিন আগে। তারপরেই ওই কাণ্ড। হ্যাম রেডিয়োর সহযোগিতায় বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে তাঁর।
সরস্বতী পুজোর দুপুরে বহড়ু স্টেশনে বসেছিলেন এক যুবক। রুক্ষ শুষ্ক চুল। পোশাক তেমন পরিপাটি নয়। অপরিচিত লোক দেখে শুরু হয়ে যায় মারধর। পুলিশ যুবককে উদ্ধার করে। জানা যায়, গড়িয়ার বাসিন্দা ওই যুবক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। মানসিক অবসাদ কাটাতে নির্জন জায়গায় গিয়ে বসেন মাঝে মধ্যে। তাঁকে শিশুচোর সন্দেহে পেটায় পেটায় বহড়ুর কিছু লোক।
গত কয়েক দিনে গুজবের জেরে এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। ট্রেনে-বাসে, চায়ের দোকানে চলছে এই নিয়ে আলোচনা। কখনও রটে যাচ্ছে, কিডনি পাচারকারী ঘুরছে। বাড়িতে কাউকে একলা পেলে কিডনি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কখনও শোনা যাচ্ছে ছেলেধরা ঢুকেছে। নারী পাচারকারীরা এলাকায় ঘুরছে বলেও রটেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে নানা গুজব। কোনওটারই বাস্তবতা খুঁজে পায়নি পুলিশ। কিন্তু লোকের মুখে মুখে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যার শিকার হচ্ছেন নিরাপরাধ মানুষজন। অনেক ক্ষেত্রে মানসিক ভারসাম্যহীন বা ভবঘুরে প্রকৃতির মানুষজনকে ধরে চলছে মারধর। গত রবিবার স্রেফ সন্দেহের বশে গণপ্রহারে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে মগরাহাটে। জয়নগর, বহড়ু, হোটর, ধামুয়া-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক গণপ্রহারের ঘটনা ঘটেছে।
গুজব ছড়ানোর অপরাধে কুলতলিতে গ্রেফতার হয়েছে এক জন। পরিস্থিতি সামলাতে লিফলেট বিলি করছে পুলিশ। মাইকে প্রচার চলছে। বলা হচ্ছে, গুজবে কান দেবেন না। আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজনও তিতিবিরক্ত। অনেকে নিজেরাই গুজবের বিরুদ্ধে প্রচারে শামিল হয়েছেন।
ভিন্ রাজ্য বা জেলা থেকে যাঁরা কাজে আসেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, আতঙ্কে তাঁরা। জয়নগরের নিমপীঠে কাজ করতে এসেছেন ঝাড়খণ্ডের এক বাসিন্দা। বললেন, ‘‘এলাকায় কেউ তেমন চেনে না। এখানকার ভাষাটাও ভাল বলতে পারি না। কখন কী ঘটে যায়, রাস্তায় বেরোতেই ভয় করছে।’’
প্রচারের জেরে মারধরের ঘটনা কমেছে বলে দাবি পুলিশের। ইতিমধ্যে কিছু জায়গায় সন্দেহভাজন কয়েক জনকে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দিয়েছে জনতা। তবে কোনও ক্ষেত্রেই সন্দেহভাজনকে জেরা করে আপত্তিকর কিছু পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানাচ্ছে। শিশু চুরি, কিডনি পাচার বা এ ধরনের কোনও অভিযোগ গত কয়েক দিনে থানায় জমা পড়েনি বলেও জানিয়েছে পুলিশ।