১৭ বছরের ওই কিশোরীর চোখে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন। প্রতীকী ছবি।
সম্প্রতি দেখাশোনা হয়। দিন কয়েকের মধ্যে গোঘাটের এক কিশোরীর বিয়ে নিয়ে কথাবার্তাও চলছিল। ওই কিশোরী অবশ্য চেয়েছিল, এই বয়সে হাতা-খুন্তি নয়, মাধ্যমিক পরীক্ষায় কলম চালাবে সে। তার পরে আরও পড়বে। তার সেই ইচ্ছের কথা কানে পৌঁছয় প্রশাসনের। তাতেই মেলে সুরাহার রাস্তা।
প্রশাসনের মধ্যস্থতায় নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা থেকে ক্ষান্ত হয়েছেন তার অভিভাবকেরা। বিয়ে আটকে যাওয়ায় মেয়েটি খুশি মনে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। শুক্রবার ছিল ইংরেজি। বিকেলে বাড়ি ফিরে সে জানায়, বাংলা এবং ইংরেজি দু’টি পরীক্ষাই বেশ ভাল হয়েছে। তার কথায়, ‘‘বাবার সম্মান রাখতে পাত্রপক্ষের সামনে হাজির হয়েছিলাম। তবে, এখনই বিয়ের ইচ্ছে নেই। বাংলা, ভূগোল এবং ইতিহাস আমার প্রিয় বিষয়। মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিকে আর্টস নিয়ে পড়ব। তার পরে কলেজ।’’
১৭ বছরের ওই কিশোরীর চোখে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন। বাড়িতে ঠাকুমা-ঠাকুরদা, বাবা-মা, দাদা আছেন। মাটির দোতলা বাড়ি। ছাউনি অ্যাসবেস্টসের।
হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোঘাট থানায় খবর আসে, মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়েছে মার্চের গোড়ায়। কিন্তু, সে এখন বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চায় না। এর পরেই বুধবার স্থানীয় ব্লক অফিস, পুলিশ এবং চাইল্ড লাইনের আধিকারিক মেয়েটির বাড়িতে যান। বড়দের বোঝানো হয়, নাবালিকার বিয়ে দেওয়া আইনত নিষিদ্ধ। ভুল মেনে মেয়েটির বাবা লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন, নির্দিষ্ট বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আর করবেন না।
মেয়েটির বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। হাটে আনাজও বেচেন। তিনি জানান, হঠাৎ যোগাযোগ হওয়ায় মেয়ের বিয়ের জন্য তাঁরা এগিয়েছিলেন। পাত্রপক্ষই মার্চে বিয়ের কথা বলেছিল। তবে, তিনি চেয়েছিলেন মাধ্যমিকের পরে বিয়ে দিতে। তিনি বলেন, ‘‘একটা ভুল হয়তো হচ্ছিল। তবে চূড়ান্ত কিছু হয়নি। মেয়ে যত দূর পড়তে চায়, পড়াব। ও পড়াশোনা শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াক।’’