Adhir Ranjan Chowdhury

বাংলা হল পুকুর, ভারত হল নদী, আমাদের এখন নদীর কথা বেশি ভাবতে হচ্ছে, তৃণমূল-আপস নিয়ে অধীর

রাজ্য নয়, জাতীয় রাজনীতিই যে এখন অগ্রাধিকার পাবে, তা স্পষ্ট করলেন অধীর। নদী এবং পুকুরের মধ্যে তুলনা টেনে তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক কেমন দাঁড়াবে, তারও একটা ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৩ ১৪:২৩
Share:

অধীর চৌধুরী। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর অবস্থান সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুকুর এবং নদীর তুলনা টানলেন কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। ‘ইন্ডিয়া টিভি’তে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ জানান, রাজ্য এবং দেশের পরিস্থিতি আলাদা। তবে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণকে মাথায় রেখেও জাতীয় রাজনীতিই যে এখন তাঁর কাছে অগ্রাধিকার পাবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা। লোকসভা থেকে সাসপেন্ড হওয়া নিয়েও এই সাক্ষাৎকারে সরব হয়েছেন অধীর।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সম্পর্ক ‘মধুর’ বলেই জানে সকলে। সাগরদিঘির উপনির্বাচনের পরে যা আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। লোকসভায় অনাস্থা-বিতর্কের জবাবি ভাষণে মমতার সঙ্গে অধীরের বিরোধের বিষয়টি উস্কে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনাস্থা-বিতর্কের বক্তা হিসাবে প্রথম অধীরের নাম না থাকার বিষয়টিকে খোঁচা দিয়ে মোদী বলেছিলেন, ‘‘এই অনাস্থা-বিতর্কে এমন সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে, যা আগে কখনও দেখিনি, শুনিনি, এমনকি কল্পনাও করিনি! বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতার (অধীর) নাম প্রথমে বক্তাদের তালিকাতেও ছিল না!’’ তার পরেই কংগ্রেস সাংসদদের লক্ষ্য করে মোদী বলেন, ‘‘আপনাদের দুর্বলতা কোথায়? কেন অধীরবাবুকে কোণঠাসা করছেন? জানি না, কলকাতা থেকে কোনও ফোন এসেছে কি না!’’ অর্থাৎ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাঁর সঙ্গে অধীরের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের এবং সুবিদিত, তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বকে অধীরকে বক্তা তালিকায় না-রাখার কথা বলেছেন কি না। মোদীর খোঁচায় অস্বস্তিতে পড়তে হয় অধীরকেও। অধীর সাসপেন্ড হওয়ার পর অবশ্য বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ঐক্যের ছবিটিই ধরা পড়েছিল। রাজনৈতিক দূরত্ব ভুলে অধীরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূল এবং তৃণমূল নেতৃত্ব সম্পর্কে অধীরের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যকে তুলে ধরে রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয়। সে সবের উত্তর দিতে গিয়েই নদী এবং পুকুরের উদাহরণ টেনে অধীর বলেন, “পুকুর এবং নদীর মধ্যে ফারাক আছে। আমার কাছে বাংলা হল পুকুর। আর ভারত হল নদী। আমি যেটা বলতে চাই, সেটাই বলি। পিছন থেকে কথা বলি না।” মোদী না মমতা, রাজনৈতিক ভাবে কে বড় শত্রু এই প্রশ্নের উত্তরে অধীর বলেন, “আমি কাউকে শত্রু বলে মনে করি না।” মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী, উভয়কেই তিনি যে শ্রদ্ধা করেন সে কথা জানিয়ে অধীর বলেন, “আমার তাঁদের (মোদী এবং মমতা) বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কোনও লড়াই নেই। কিন্তু রাজনৈতিক এবং আদর্শগত লড়াই আছে।” লোকসভা ভোটে কংগ্রেস তৃণমূলের হাত ধরবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে খানিক রহস্য জিইয়ে রেখেই অধীর বলেন, “রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প।”

Advertisement

তবে রাজ্যে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে তিনি ‘স্থানীয় ভাবে’ লড়াই চালিয়ে যাবেন, সেই ইঙ্গিত দিয়ে অধীর বলেন, “(রাজ্যে) কিছুই ঠিক নেই। আমরা যা করছি স্থানীয় ভাবে করছি। তার মানে এই নয় যে, সব কিছু ঠিক আছে।” সম্প্রতি তৃণমূলকে ‘চোরের দল’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন অধীর। তাঁর নিশানা থেকে বাদ পড়েননি মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পটনায় যখন বিরোধী নেতা-নেত্রীদের বৈঠক চলছে, সেই সময় অধীরের এই ভূমিকা নিয়ে সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন ওঠে। উত্তরে অধীর বলেন, “পটনার বিষয়টি আলাদা। আর বাংলার বিষয়টি আলাদা। সেই সময় বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট চলছিল।” অধীর এ-ও দাবি করেন যে, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মোদী। তাঁকে লোকসভা থেকে সাসপেন্ড করার নেপথ্যে, বিজেপির ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’কেই দুষেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, অগস্ট মাসের গোড়াতেই পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধী প্রার্থীদের অপহরণ করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন অধীর। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার অভিযোগ নিয়ে তেমন সরব হতে দেখা না গেলেও, বাংলার শাসকদলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী জোট দানা বাঁধবে কী ভাবে, তা নিয়ে খোঁচা দিয়েছিল বিজেপিও। লোকসভায় দাঁড়িয়ে অধীর এবং মমতার রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে খোঁচা দেন মোদীও। এই আবহে অধীরের নদী এবং পুকুরের মধ্যে তুলনা টানাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement