কেতুগ্রামে নিহত ছাত্রীর পরিবারের কাছে গেলেও সবংয়ে নিহত ছাত্র পরিষদের সমর্থকের বাড়িতে কেন গেলেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, সেই প্রশ্ন উঠেছিল দলের অন্দরেই। শেষ পর্যন্ত সবংয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন অধীর চৌধুরী। এবং তাঁর এই সবং-যাত্রা নিয়েও টানাপড়েন বেধে গেল স্থানীয় বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে! বাংলা বন্ধের পরে সবং-কাণ্ডে প্রদেশ কংগ্রেসের ঘরোয়া বিবাদে নতুন মাত্রা যোগ হল!
সংসদের বাদল অধিবেশন শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। আর সে দিনই প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়াকে (ঘটনাচক্রে, যিনি মানসের ভাই) জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আজ, শুক্রবার সবং যাচ্ছেন অধীর। সবংয়ে গিয়ে প্রথমে নিহত ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানার বাড়ি এবং পরে সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের অকুস্থলে যাওয়ার কথা তাঁর। কিন্তু সবংয়ের বিধায়ক মানসই প্রদেশ সভাপতির সঙ্গী হচ্ছেন না! অধীরের সবং-সফরের কথা এ দিন মানস প্রথম জেনেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল পণ্ডার কাছ থেকে। তার পরে মানসের বক্তব্য, ‘‘বিধানসভায় শুক্রবার আশ্বাসন কমিটির বৈঠকে সংখ্যালঘু দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা। তার আগে এবং পরে সবংয়ের মামলা নিয়ে হাইকোর্টে আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক আছে। আগে যদি সভাপতি আমাকে জানাতেন, তা হলে হয়তো একটা ব্যবস্থা করা যেত।’’
এমনিতেই বন্ধের দিন বদল নিয়ে অধীর-মানস স্নায়ুর লড়াই এখন তুঙ্গে। অধীর শিবিরের তরফে মানসকে আগের দিন এর জন্য তীব্র কটাক্ষও করা হয়েছে। তার মধ্যেই সবং যাওয়ার খবর অধীর মানসকে না জানানোয় জলঘোলা শুরু হয়েছিল এ দিন। পরিস্থিতি আন্দাজ করে সন্ধ্যায় অবশেষে মানসকে এসএমএস করে তাঁর সঙ্গে যাওয়ার অনুরোধ জানান অধীর। মানসও পাল্টা এসএমএসে জানিয়ে দিয়েছেন, কেন তিনি যেতে অপারগ। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন, প্রদেশ সভাপতি দেরি করে ফেললেন! তবে এ যাত্রায় সবং না গেলেও আগামী ২৪ অগস্ট সেখানে নিহত ছাত্রের স্মরণসভায় অধীরকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি। আর দিল্লিতে বসে অধীর বলেছেন, ‘‘কিছু সমস্যা হচ্ছে জানি। তবু সবাইকে নিয়ে চলার চেষ্টা করছি। চাপানউতোর যা-ই থাক, জেলায় জেলায় কংগ্রেস কর্মীদের অন্তত এখন মাঠে দেখা যাচ্ছে!’’
নিহত ছাত্রের পরিবার এ দিনই কলেজের ঘটনার অভিযোগ ডাকযোগে পাঠিয়েছে সবং থানায়। অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অমূল্য মাইতিরও। তবে কৃষ্ণের পরিবারের অভিযোগপত্র এখনও পৌঁছয়নি বলে সবং থানা সূত্রে জানানো হয়েছে। নিহতের মেজদা চন্দন জানা এ দিন বলেন, “আমরা জানি, ঘটনার পিছনে অমূল্য মাইতি, বিপুল মাইতি, শেখ মুন্না-সহ আরও অনেকে রয়েছে। তাই সেই ১৫ জনের নাম দিয়ে অভিযোগ পাঠিয়েছি।” কিন্তু ডাকযোগে কেন? চন্দনের জবাব, “ভাইয়ের খুনের দিনের রাত দু’টো পর্যন্ত পুলিশ সুপার আমাদের অভিযোগ নেননি। তাই আর থানায় যাব না।” তৃণমূলের জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্যবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “যে ১৫ জনের নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নিহতের পরিবার চেনেই না। এই সব কিছুই রাজনৈতিক উস্কানিতে হচ্ছে!” সবং-কাণ্ডে এ দিন মেদিনীপুর আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন সবং কলেজের আর এক শিক্ষাকর্মী স্বপন ভৌমিক। আর হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার ব্যাপারে আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মানস ও আব্দুল মান্নান।