BJP

ভাবা হচ্ছে ‘নিরাপদ’ আসনের কথা, ডায়মন্ড হারবারে আর দাঁড়াচ্ছেন না অভিষেক?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে অভিষেকের নাম ইতিমধ্যেই স্বীকৃত হয়ে গিয়েছে দলে।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:৫২
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

আসন বদলাচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের? তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আর দাঁড়াচ্ছেন না ডায়মন্ড হারবার থেকে? তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে এমন জল্পনাই শোনা যাচ্ছে। তবে তৃণমূলের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এ নিয়ে এখনও হয়নি।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে অভিষেকের নাম ইতিমধ্যেই স্বীকৃত হয়ে গিয়েছে দলে। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে দলের সবচেয়ে বড় প্রচারক যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হন, তা হলে দ্বিতীয় ‘স্টার প্রচারক’ যে অভিষেকই, তা নিয়ে কারও সংশয় নেই। সুতরাং অভিষেক শুধুমাত্র নিজের কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ থাকতে পারবেন না। তাঁকে গোটা রাজ্য চষে বেড়াতে হবে। সে কথা মাথায় রেখেই অভিষেকের জন্য আরও ‘নিরাপদ’ আসনের কথা ভাবা হচ্ছিল বলে তৃণমূলের সূত্রের খবর। ‘নিরাপদ’ আসন চিহ্নিতও হয়ে গিয়েছে। সেটি হল দক্ষিণ কলকাতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের খাসতালুক।

অভিষেককে দক্ষিণ কলকাতায় দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই নিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ওই কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ সুব্রত বক্সির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই কথা বলেছেন বলেও খবর। অভিষেক দক্ষিণ কলকাতা থেকে লড়বেন আর সুব্রত বক্সি লড়বেন অভিষেকের ছেড়ে আসা ডায়মন্ড হারবার থেকে। আপাতত এমনটাই ভাবা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: আমি সত্যি কথার পাহারাদার, বললেন মমতা​

১৯৯১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটানা দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে ভবানীপুরের তৎকালীন বিধায়ক সুব্রত বক্সি নিজের আসনটি ছেড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতা উপনির্বাচনে ভবানীপুর থেকে জিতে প্রথম বারের জন্য বিধায়ক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পা রাখেন। আর মমতার ছেড়ে দেওয়া দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচন জিতে সুব্রত বক্সি প্রথম বারের জন্য সাংসদ হিসেবে পা রাখেন লোকসভায়।

অভিষেক প্রথম বার ভোট লড়েন ২০১৪-য়। ডায়মন্ড হারবার আসন থেকে তিনি ৭১ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়ী হন। প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ছিল ৪০.৩১ শতাংশ।

আর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সুব্রত বক্সি দক্ষিণ কলকাতা থেকে জয়ী হন ১ লক্ষ ৩৬ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। কিন্তু সুব্রত বক্সির প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ছিল ৩৭ শতাংশেরও কম। বিরোধী ভোট বিজেপি, বাম এবং কংগ্রেস প্রার্থীর মধ্যে তিন ভাগে ভেঙে যাওয়াতেই লাখ ছাড়িয়েছিল বক্সির জয়ের ব্যবধান।

আরও পড়ুন: আদিবাসী তরুণ-তরুণীদের পুলিশে চাকরির প্রশিক্ষণ​

২০১৪ সালের ভোটচিত্রের দিকে চোখ রাখলে দক্ষিণ কলকাতাকে ডায়মন্ড হারবারের চেয়ে নিরাপদ ভাবার কোনও কারণ নেই। কিন্তু তৃণমূল নেতারা বলছেন, দক্ষিণ কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেই ভোট হয়ে যায়। কোন বছর কে কত ভোট পেল, ও সব হিসেব দক্ষিণ কলকাতার ক্ষেত্রের খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয় বলেই তাঁদের মত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো দক্ষিণ কলকাতায় প্রার্থী হলে পরিস্থিতির তাৎপর্যটাই বদলে যায় বলে তৃণমূল নেতাদের দাবি।

শুধু এটুকুই নয়, আরও কিছু ফ্যাক্টর ঘুরছে তৃণমূল নেতাদের মাথায়। প্রথমত, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্র ভবানীপুর পড়ছে দক্ষিণ কলকাতার মধ্যে। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা আসনের মধ্যে যে ৭টি বিধানসভা কেন্দ্র পড়ছে, সেই ৭টি কেন্দ্রের বিধায়কই রাজ্যের মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। ভবানীপুর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের কেন্দ্র। বালিগঞ্জে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, রাসবিহারীতে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বেহালা পূর্বে শোভন চট্টোপাধ্যায়, বেহালা পশ্চিমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা বন্দরে ফিরহাদ হাকিম, কসবায় জাভেদ খান। এমন একঝাঁক বাঘা তৃণমূল নেতা যেখানকার ময়দানে হাজির, আর কোনও কেন্দ্রই তার চেয়ে বেশি নিরাপদ হতে পারে না বলে তৃণমূল মনে করছে।

তবে অভিষেকের কেন্দ্র বদলের জল্পনা নিয়ে তৃণমূলের কোনও নেতাই অবশ্য একটি শব্দও উচ্চারণ করছেন না। প্রথমত, দলের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি। দ্বিতীয়ত, বিষয়টার সঙ্গে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জড়িত। অতএব প্রার্থী তালিকা ঘোষিত হওয়ার আগে পর্যন্ত সবার মুখেই কুলুপ।

আরও পড়ুন: চোরাচালান বন্ধে হুঁশিয়ারি পুলিশকে​

মহেশতলার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান দুলাল দাস বলছেন, ‘‘কে কোথায় প্রার্থী হচ্ছেন জানি না। এ নিয়ে আমার সঙ্গে কারও কোনও আলোচনা হয়নি। তবে দল যাকে প্রার্থী করবে, তাঁর হয়েই আমরা লড়ব।’’

দুলাল দাসের আসন মহেশতলা পড়ছে অভিষেকের বর্তমান নির্বাচনী ক্ষেত্র ডায়মন্ড হারবারের মধ্যে। দুলাল এখন অভিষেকের ঘনিষ্ঠ বৃত্তেও রয়েছেন। তাই ডায়মন্ড হারবার থেকে অভিষেকের সরে যাওয়া দুলালের পক্ষে খুব একটা সুখের খবর না হওয়াই স্বাভাবিক। তবে দুলাল নিজের প্রতিক্রিয়ায় তেমন কিছু বুঝতে দিচ্ছেন না। বলছেন, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা হওয়ার প্রশ্নই নেই। দল যেটা ঠিক করবে, আমরা সেটার সঙ্গেই থাকব।’’

তৃণমূল মুখ খুলতে রাজি না হলেও, বিরোধীরা কিন্তু অভিষেকের কেন্দ্র বদলের জল্পনায় বেশ উৎসাহিত। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বললেন, ‘‘তৃণমূল ভাবছে যে, দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের জন্য নিরাপদ। কিন্তু আমি বলছি, এ রাজ্যের কোনও আসন আর তৃণমূলের জন্য নিরাপদ নয়।’’ কেন নিরাপদ নয়? দিলীপ ঘোষ বিশদ ব্যাখ্যায় যাচ্ছেন না। কিন্তু বলছেন, ‘‘নিরাপদ যে নয়, তা প্রত্যেকেই বুঝতে পারবেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলের বর্তমান সাংসদদের অর্ধেকই আসন্ন ভোটে টিকিট পাবেন না। তৃণমূল জানে, ওই সাংসদদের পক্ষে আর জেতা সম্ভব নয়। তাই টিকিট দেবে না। তবে প্রার্থী বদলেও শেষ রক্ষা করতে পারবে না।’’

আরও পড়ুন: আড়াই লাখের সুপারি! টিটাগড়ের মণীশ-সতীশ জুটিকে সরাতে ষড়যন্ত্র আরও গভীরে​

আর রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলছেন, ‘‘আমরা কোনও ব্যক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি না। রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির লড়াই। সে লড়াইয়ে আমরা মানুষকে বিজেপির পাশে থাকার আহ্বান জানাব। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায় প্রার্থী হচ্ছেন, কোথায় হচ্ছেন না, তা নিয়ে আমরা ভাবিত নই।’’

অরুণাভ বলছেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস এখন নিজেরাই বুঝতে পারছে না, ঠিক ক’টা ভোট ওদের আছে। তাই ঝুঁকি নিতে চাইছে না। সেই জন্যই অভিষেকের জন্য দক্ষিণ কলকাতাকে বেছে নিচ্ছে তারা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement