‘নবজোয়ার’ যাত্রা: কোচবিহার শহরে কলেজ ময়দান থেকে মদনমোহন মন্দিরে যাওয়ার পথে অভিষেক। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
তাঁর জনসংযোগ যাত্রা নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষের জবাব পাল্টা টিপ্পনীতে ফেরত দিলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি নিয়ে বলতে গিয়ে বিজেপির রাজ্য দফতরে সোমবার শুভেন্দুর মন্তব্য ছিল, “সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন কর্মসূচি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রযোজিত একটি চিত্রনাট্য।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘মহারানির যুবরাজ বিলাসবহুল রথে প্রজা দর্শনে যাবেন। এ নিয়ে আমরা ভাবিত নই। আগামী দিনে লড়াইটা হবে তৃণমূলের পরিবারবাদের সঙ্গে বিজেপির বিকাশবাদের।”
কোচবিহার সদরে মদনমোহন মন্দিরে এ দিন বিকেলে পুজো দিয়ে বেরনোর পরে, অভিষেক পাল্টা বলেন, ‘‘ওঁকে (শুভেন্দু) বলব, এ সব দিকে নজর না দিয়ে কে, কোথায় প্রার্থী হবেন সেটা আগে খুঁজুন। নইলে, আবার হাই কোর্টে ছুটতে হবে নির্বাচন দেরিতে করানোর আর্জিতে। কে, কোথায় বিজেপির প্রার্থী হবে, সেটা আগে ঠিক করুন। ষাট হাজারের উপরে বুথ। প্রার্থী নেই। ষাট হাজার লোক কোথায়! তাঁকে বলব, এ সব জিনিসে সময় অপচয় না করে গঠনমূলক কিছু করুন, মানুষের পাশে থাকুন।”
বস্তুত, এই জনসংযোগ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য যে প্রার্থী খোঁজা, তা ফের স্পষ্ট করে দিয়ে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘ভারতবর্ষ জুড়ে এমন প্রয়াস কোনও রাজনৈতিক দল নেয়নি। পঞ্চায়েতের মানুষের কাছে গিয়ে আমরা জানতে চাইছি, আপনাদের নির্দিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদে কাকে প্রার্থী চাইছেন।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসহীন, রক্তপাতহীন নির্বাচনের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে যথাযথ প্রার্থী নির্বাচিত করা। যদি সঠিক প্রার্থী নির্বাচিত না হয়, তা হলে যতই চেষ্টা করা হোক, যে-ই চেষ্টা করুক কোনও দিন আমরা সফল বা সক্ষম হব না।’’
এই কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে সোমবার বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, মঙ্গলবার কোচবিহারের দিনহাটা থেকে অভিষেক এই জনসংযোগ কর্মসূচি শুরু করতে চলেছেন। তার আগে, এ দিন টুইট-বার্তায় অভিষেক-সহ এই কর্মসূচিতে যুক্ত তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মমতা। রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এই কর্মসূচি বিশেষ ভূমিকা নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তৃণমূলনেত্রী। জবাবে ‘দিদি’-কে ধন্যবাদ দিয়ে পাল্টা টুইট করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
রাজ্য বিজেপির তরফে প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের অন্দরের ‘কোন্দলের’ কথা টেনে খোঁচা দেওয়া হচ্ছে। অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল বড় দল বলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিরোধীদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই! বিরোধীরা এইটুকু। তাতেই গোষ্ঠী, দলের মধ্যে উপদল, তার মধ্যে উপদল লেগেই রয়েছে। তাদের বলব, তৃণমূল কোথায়, কী করছে তা অনুসরণ করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী কে, কোথায় দাঁড়াবে, সেটায় বেশি নজর দিন।’’
ঘাটালের দাসপুরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জনসংযোগ মানে মানুষের সঙ্গে হাঁটা, কথা বলা, তাঁদের অভাব-অভিযোগ শোনা। কিন্তু তার পরিবর্তে ভাইপো একশো কোটি টাকা খরচ করে, রাষ্ট্রের পুলিশ ব্যবহার করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে বসে জনসংযোগ করবেন। এর জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে তাঁবু খাটানো হয়েছে।’’ সুজনের হুঁশিয়ারি, ‘‘সব খরচের হিসাব চাইবেন আমজনতা। পাশে থাকবে সিপিএম।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘ঠান্ডার মধ্যে টি-শার্ট গায়ে কিলোমিটারের পরে, কিলেমিটার পথ হেঁটে দেখিয়েছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর দলের সমর্থক হিসেবে বলছি না। যা হয়েছে, তা-ই বলছি। হেলিকপ্টারে গিয়ে বা ভ্যানিটি ভ্যান নিয়ে কি জনসংযোগ হয়?’’ অভিষেকের জবাব, ‘‘ওঁরাও ক্যারাভ্যান নিয়ে ঘুরুন। তাঁবু খাটিয়ে থাকুন। তার পরে কিছু বললে, শোনা যাবে।’’