রবিবার মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় জনসভা ছিল অভিষেকের। ফাইল চিত্র
মুর্শিদাবাদে গিয়ে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীকেই নিশানা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের অভিমত, বিজেপির সঙ্গে তলে তলে ‘সেটিং’ রয়েছে কংগ্রেসের অধীরের। আর এই ‘সেটিং’-এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অভিষেকের কথায়, ‘‘দিদির পুলিশের উপর ভরসা না করে অধীর দাদার পুলিশে আস্থা রাখেন। আর এই দাদা হলেন স্বয়ং অমিত শাহ।’’
রবিবার মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় জনসভা ছিল অভিষেকের। সেখানেই মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা অধীরকে তাঁর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত নিয়ে কটাক্ষ করেন তৃণমূল নেতা। বাংলায় থাকলেও লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা সাংসদ অধীর রাজ্যের পুলিশ অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনস্থ পুলিশ বিভাগের নিরাপত্তা নেন না। বদলে তাঁর নিরাপত্তার দেখাশোনা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। যে কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন। লোকসভার তৃণমূল সাংসদ অভিষেক এ বিষয়েই অধীরকে আক্রমণ করেন। হরিহরপাড়ার জনসভায় অভিষেক বলেন, ‘‘অধীর কোন পুলিশ নিয়ে ঘুরে বেড়ান? উনি দিদির নয়, দাদার পুলিশে বিশ্বাস করেন। এই দাদা অমিত শাহ। যিনি এনআরসি আনতে চান, যার অধীনে সিআরপিএফ, বিএসএফ। যারা সীমান্তে গরীব মানুষের উপর অত্যাচার করছে। নির্দোষদের মাথায় গুলি করে মারছে। সেই বিএসএফ-সিআরপিএফ অধীরকে পাহারা দেয়! এর পরও বলে দিতে হবে, কার সঙ্গে কার তলায় তলায় যোগ? কার সঙ্গে কার সেটিং?’’
জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিজেপি। যদিও অভিষেক বলেছেন, রাজ্যে অর্থাৎ বাংলায় দুই দল মোটেই একে অপরের বিরুদ্ধে রা কাড়ে না। তাঁর বিজেপি-কংগ্রেস ‘সেটিং’ তত্ত্বের পক্ষে আরও বেশ কিছু প্রমাণ দিয়ে অভিষেক বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস এখানে বিজেপির বি-টিম। কংগ্রেসকে কোনও দিন দেখবেন না বিজেপির বিরুদ্ধে সাংবাদিক বৈঠক করতে। সুকান্ত, শুভেন্দু,দিলীপের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে দেখেছেন অধীরকে? বা সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপদের কখনও দেখেছেন অধীরকে আক্রমণ করতে?’’
অধীরের বিরুদ্ধে রাজ্যের সমস্যা নিয়ে উদাসীনতার অভিযোগও এনেছেন অভিষেক।অভিষেক বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ এখনও ১০০ দিনের টাকা পাননি। গত চার বছরে অধীর চৌধুরী কি কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রীর বা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ১০০ দিনের টাকা আদায়ের সুপারিশ করেছেন বা মিড ডে মিলের বন্ধ হয়ে যাওয়া টাকা, আবাসের টাকা, রাস্তার টাকা, সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা কেন বন্ধ করা হয়েছে তার জবাব চেয়েছেন কেন্দ্রের কাছে?’’ অধীরকে পরোক্ষে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই অভিষেক বলেছেন, ‘‘এমন একটাও উদাহরণ পেলে মুর্শিদাবাদে পা রাখব না জনসংযোগ যাত্রা শেষ করব।’’ এমনকি, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ২২টি বিধানসভাতেই জিতবেন বলেও চ্যালেঞ্জ করেন অভিষেক।
অভিষেকের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে পাল্টা অধীর বলেছেন, ‘‘লোকসভায় বাংলার মোট ৪২ আসন। কংগ্রেস এখানে তো খই ভাজার জন্য বসে নেই! বহরমপুর ছিনিয়ে নেওয়ার যে গল্প উনি বলছেন সেই গল্প আমি আগেও শুনেছি। খোকাবাবু বা তাঁর পিসিকে আমন্ত্রণ করছি তারা বহরমপুরে লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করুন। যদি আমি হেরে যাই তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। বহরমপুরে এসে খোকাবাবু বা পিসিমণি যদি অধীর চৌধুরীকে হারিয়ে যেতে পারেন তাহলে রাজনীতিই আর করব না। ওপেন চ্যালেঞ্জ করছি।’’