(বাঁ দিকে) হাঙ্গেরি ও রাশিয়ার তরুণ-তরুণী। বামেদের মিছিলের জমায়েত (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতায় বাম দলগুলির ডাকে প্যালেস্তাইন সংহতি মিছিলে হাঁটলেন রাশিয়ার তরুণী এবং হাঙ্গেরির তরুণ। বুধবার এই জুটি এসেছিলেন কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া ঘুরতে। সেখান থেকে ফেরার পথেই তাঁদের চোখে পড়ে লাল পতাকার মিছিল। আর মিছিলের ব্যানারে প্যালেস্তাইনের প্রতি সংহতির কথা দেখেই তাতে মিশে যান দু’জন। কেন? ভাঙা ইংরিজিতে তরুণী বললেন, ‘‘গাজ়ায় যা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে তো যে কোনও মানুষেরই কথা বলা উচিত। তাই না?’’ আর পাশাপাশি হাঁটতে থাকা হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের তরুণের কথায়, ‘‘দেখে ভাল লাগল এত মানুষ হাঁটছেন। তাই আমরাও হাঁটছি।’’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়ন এবং হাঙ্গেরির সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। হিটলারের পতনের পর মস্কোর প্রবল নিয়ন্ত্রণে পূর্ব বা মধ্য ইউরোপের যে দেশগুলি হঠাৎ ‘সমাজতান্ত্রিক’ হয়ে উঠেছিল, হাঙ্গেরি তার অন্যতম। সোভিয়েট ইউনিয়নের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া ‘ব্লক’ কোমিকনেও ছিল হাঙ্গেরি। সোভিয়েট ভেঙে যাওয়ার বছর দুয়েক আগেই অবশ্য হাঙ্গেরিতে ‘সমাজতন্ত্রের’ পতন ঘটে। ঘটনাচক্রে, যে রাশিয়া এবং হাঙ্গেরির জুটি বুধবার বামেদের মিছিলে হাঁটলেন, সেই দুই দেশের পুরনো ‘আদর্শ’ বাংলার বামেদের আদর্শে রয়ে গিয়েছে আজও। শুধু বাংলার বামেরাই নয়, ভারতীয় শাসকদের সঙ্গেও সোভিয়েট ইউনিয়নের সম্পর্ক নিবিড় ছিল শেষ পর্যন্ত। ১৯৫৫ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই বুলগানিন ও সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নিকিতা ক্রুশ্চেভকে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় গণ-সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। সেই মঞ্চে ছিলেন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক অজয় ঘোষও।
সে দিন আর নেই। লাল চিন বাদ দিলে, সমাজতান্ত্রিক পৃথিবীর মানচিত্র প্রায় গোটাটাই বদলে গিয়েছে। তবে যুদ্ধ বা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লাল পতাকার মিছিল এখনও দেখে কলকাতা। যে মিছিল দেখে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাতে হাঁটতে শুরু করেন দূর দেশ থেকে আসা বিদেশি, বিদেশিনী। কথায় কথায় মিছিলে হাঁটতে থাকা তরুণ জানালেন, ‘‘আমরা দুই দেশের হলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে আমাদের মনোভাব মেলে। অন্য দেশের অন্য শহরেও আমরা নানা ধরনের কর্মসূচিতে থেকেছি।’’ কিন্তু তাঁরা ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছেন। তাই নাম, পরিচয় জানানো থেকে বিরত থাকতে চাইলেন দু’জনেই।
মিছিলে বিদেশিদের দেখে সেলফি তোলার হিড়িক দেখা গেল বাম কর্মী-সমর্থকেদের মধ্যে। সেই সময়ে দেখা যায়— হাঙ্গেরির তরুণ মুখ ঢাকছেন হাত দিয়ে। তরুণীও মুখ আড়াল করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! দু’জনেই কিছুটা থমকে গেলেন। একটু একটু করে পিছনে হাঁটতে শুরু করেন। শিয়ালদহ উড়ালপুলের মুখ থেকে মিছিলের বাইরে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল দু’জনকে।