বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হল ওই দলের জখম সদস্যদের। বুধবার, পেট্রাপোল সীমান্তে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
বিকেল সাড়ে পাঁচটা। সাইরেন বাজিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স এসে দাঁড়াচ্ছে বেনাপোল সীমান্তে। সেখান থেকে নেমে হেঁটে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ পেরিয়ে ধীরে ধীরে পেট্রাপোল সীমান্তে আসছেন এক দল মানুষ। বাংলাদেশে এক পথ দুর্ঘটনায় জখম হয়ে কারও মাথায় ব্যান্ডেজ, কারও বা চোখে-বুকে আঘাত। বুধবার এমনই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল দুই সীমান্ত এলাকা।
সূত্রের খবর, সাধারণ মানুষের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বেনাপোল থেকে ঢাকা রওনা দেয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৮৭ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল। মঙ্গলবার সকালে ফরিদপুরে পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তাঁদেরই কয়েক জন। মৃত্যু হয় ওই দলের এক সদস্য সন্তোষ মণ্ডল (৬৫) নামে ঘোলা থানার এক বাসিন্দার। দলের বাকি আহত ২৩ সদস্যকে বুধবার পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে এনে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মোটরবাইকে চেপে রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি বারাসত থেকে রওনা দেয় দলটি। মোটরবাইকে নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারায় পরের দিন বাংলাদেশের বেনাপোল থেকে দু’টি বাসে ঢাকার দিকে রওনা দেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টির বাসের মধ্যে একটির চালক এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে গাছে ধাক্কা মারেন। ফরিদপুরের এই দুর্ঘটনায় এক বাইকচালক, পথচারী, সন্তোষবাবু-সহ মোট ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। দলের বাকি সদস্যদের ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পরে এ দিন দেশে আনা হয়।
আজ, বৃহস্পতিবার সন্তোষবাবুর দেহ আসবে বাংলাদেশ থেকে। তাঁর ছেলে শুভাশিস বলেন, ‘‘রক্তদান নিয়ে সচেতনতার কাজ করতেন বাবা।’’ দলেরই অন্য সদস্য শেখ ইদ্রিস আলি নামে বারাসতের এক বাসিন্দার মাথা ফেটেছে। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার আগে তীব্র ঝাঁকুনি হয়েছিল। আর কিছু মনে নেই। বেঁচে ফিরতে পারব সেই জোর হারিয়ে ফেলেছিলাম।’’ একই বক্তব্য, অভিজিৎ দাস, হাফিজুল ইসলাম, সঞ্জয় দাসের।
এ দিন সকাল থেকে বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায়, পেট্রাপোল থানার ওসি জখম ব্যক্তিদের বাংলাদেশ থেকে এ দেশে আনার ব্যবস্থা করেন। বিকেলে পেট্রাপোলে আসেন বারাসতের ভাইস চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়, আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমান। অশনিবাবু বলেন, ‘‘দশটি অ্যাম্বুল্যান্স এবং একটি বাসে করে আহতদের বারাসত হাসপাতালে আনা হয়েছে। চিকিৎসা চলছে।’’