—প্রতীকী ছবি।
অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে ‘রোগ’ সারার যেন লক্ষণই নেই আলিপুরদুয়ারে ঢেকলাপাড়া চা বাগানে। সম্প্রতি জেলার মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের সেই চা বাগানে অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে হাসপাতালে যেতে না পারায় কার্যত বাড়িতে পড়ে থেকে মৃত্যু হয় এক দুঃস্থ চা শ্রমিকের। সে প্রেক্ষিতে প্রশাসনের তরফে জেলায় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সুষ্ঠু ভাবে চালাতে নানা সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। তার পরেও, সেই বাগানেই হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য এক প্রসূতি নিশ্চয়যান বা মাতৃযান পেলেন না বলে অভিযোগ উঠল। পাশের চা বাগান থেকে অবশ্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু তাতেও সময় লেগে যায়। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে, সেই অ্যাম্বুল্যান্সেই সন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা।
সূত্রের খবর, ওই মহিলা এখন বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর সন্তানের শারীরিক অবস্থা ভাল নেই। শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নেওয়া হয়েছে তাকে। শিশুর বাবা সুরজ মুন্ডা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ স্ত্রীর প্রসব-বেদনা ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে এলাকার আশাকর্মীকে নিশ্চয়যানের জন্য ফোন করি। কিন্তু পাইনি।’’
ঢেকলাপাড়ার বিজেপির চা শ্রমিক সংগঠন ‘ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর শাখা সম্পাদক স্বপন সোমজার বলেন, “ওই প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে নিশ্চয়যানের জন্য বীরপাড়া হাসপাতালে ফোন করি। কিন্তু আমাকে জানানো হয়, ওই মুহূর্তে সেখানে গাড়ি নেই। বাধ্য হয়ে জয় বীরপাড়া চা বাগান থেকে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করি।’’ বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালের সহকারী সুপার বিপুল বসু অবশ্য বলেন, “জোর করে আমাদের হাসপাতালকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে। এমন কোনও ফোন আমাদের হাসপাতালের আধিকারিকেরা পাননি।”
ঢেকলাপাড়া চা বাগান এলাকার এক আশাকর্মী সুনীতা চিক বরাইক বলেন, “২২ ডিসেম্বর ওই মহিলাকে নিশ্চয়যানের মাধ্যমে বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। মঙ্গলবার জরুরি ভাবে তাঁকে আবার হাসপাতালে পাঠাতে হবে বলে আমার কাছে ফোন আসে। আমি সংশ্লিষ্ট জায়গায় যোগাযোগও করি। কিন্তু তখন সেখানকার সব নিশ্চয়যান অন্য রোগীদের পরিষেবা দিতে ব্যস্ত ছিল।’’ আলিপুরদুয়ারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “প্রসূতির পরিবার যখন মাতৃযান বা নিশ্চয়যানের জন্য ফোন করেছিল, এলাকায় সব অ্যাম্বুল্যান্সই অন্য মায়েদের পরিষেবায় ব্যস্ত ছিল। কিন্তু শিশুটিকে নিশ্চয়যানেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।”
বিষয়টি নিয়ে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক আর বিমলা। জবাব মেলেনি মেসেজের। তবে প্রশাসনের এক কর্তা জানান, প্রথম বার হাসপাতালে ভর্তির পরে, ওই পরিবারকে নিশ্চয়যান ও মাতৃযানের ‘ভাউচার’ দেওয়া হয়, যাতে তাঁদের বিনামূল্যে অ্যাম্বুল্যান্স পেতে সমস্যা না হয়। তার পরে কেন সমস্যা হল খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিন শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে মৃত চা শ্রমিক সুশীল ওরাওঁয়ের। তাঁর স্ত্রী শুকুরমণি ওরাওঁ বলেন, ‘‘এখনও কেন এমন ঘটছে? এমন হওয়া উচিত নয়।’’