সেই ওয়াই-ফাই। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও দিনের বেশির ভাগ সময় মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। ইন্টারনেটের গতিও খুব কম। জেলার বেলিয়াবেড়া ব্লকের ভামাল গ্রামের অবস্থাও সে রকমই। তাই অনলাইনে ক্লাস করার সময় সমস্যায় পড়ছে পড়ুয়ারা। তাদের কথা ভেবে এগিয়ে এলেন চার বন্ধু। এলাকায় বসল হাইস্পিড ওয়াই-ফাই।
রাজেশ তরাই, বিষ্ণুপদ বেরা, অঙ্গদ বধূক, দেবাশিষ তরাই। চার বন্ধু। সকলেরই বাড়ি ভামাল গ্রামে। রাজেশ পেশায় ইলেকট্রনিক্স টেকনিশিয়ান, অঙ্গদ মুদি দোকানের মালিক। বাকি দু’জন চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত। রাজেশ প্রথম বাকি তাঁর তিন বন্ধুকে ইন্টারনেটের সমস্যার কথা জানান। তার পর চার বন্ধুর সিদ্ধান্তে ওয়াই-ফাই লাগানো হয়। এ জন্য সমস্ত খরচ চার বন্ধু মিলেই বহন করেছেন। কেন এই উদ্যোগ? চার বন্ধুর কথায়, ‘‘এখানে ইন্টারনেটের সমস্যার জন্য অনেকেই ঠিকমতো ক্লাস করতে পারে না। সরকারি উদ্যোগে গ্রামের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা ট্যাব কেনার জন্য টাকা পেয়েছে। ওয়াই-ফাই চালু হলে পড়ুয়াদের সুবিধা হবে।’’
মঙ্গলবার থেকে গ্রামে ওয়াই-ফাই পরিষেবা চালু হয়েছে। গুড়মা হাইস্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মনসারাম বেরা, কৃষ্ণ বেরাদের কথায়, ‘‘গ্রামে মোবাইলে নেটের খুবই সমস্যা। অনেক সময় ক্লাস করতে পারতাম না। স্থানীয় কেব্ল নেটওয়ার্কের দেওয়া নেট সংযোগ থেকে ওয়াই-ফাই চালুর পরে ইন্টারনেটের গতি বেড়েছে।’’ ১৫০ মিটার ব্যবধানে বিদ্যুতের ২টি খুঁটিতে দু’টি ওয়াই-ফাই লাগানো হয়েছে। প্রায় তিনশো মিটার ব্যাসার্ধে এই পরিষেবা পাওয়া যাবে। প্রাথমিক ভাবে ৩০ জন ব্যবহার করতে পারবেন। চার বন্ধুর কথায়, ‘‘আগামী দিনে গোটা গ্রামজুড়ে মানুষজন ব্যবহার করতে পারে, আমরা সেরকম ব্যবস্থা নিচ্ছি। খরচ সাপেক্ষ বিষয়। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’ তবে পড়ুয়ারা যাতে অপব্যবহার না করতে পারেন তার জন্য ওয়াই-ফাইয়ের ‘লকিং’য়ের ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান তাঁরা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া তপন তরাই ভামাল গ্রামে থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘করোনার জন্য কলেজ বন্ধ। অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। গ্রামের ইন্টারনেটের সমস্যা অনেক সময় ক্লাস করতে পারি না। এ বার আশা করছি সব ক্লাসগুলো করতে পারব।’’ মানিকপাড়া কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া মদন মাহালিও বলেন, ‘‘নেটের সমস্যার জন্য অধিকাংশ ক্লাস করতে পারি না। গ্রামের দাদারা ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করেছে। এর ফলে ক্লাসগুলো করতে পারব।’’
সব শুনে রাজেশ, বিষ্ণুপদ, অঙ্গদ, দেবাশিষরা বলছেন, ‘‘আমরা অনেক সময় হাজার হাজার টাকা এদিক-ওদিক করে নষ্ট করে দিই। এটা না হয় গ্রামের ছেলে-মেয়েদের জন্য নষ্ট করলাম।’’