—প্রতীকী ছবি।
সহপাঠীদের মাঝে মাইক হাতে দাঁড়িয়ে সেই ছাত্রী। হাত কাঁপছে। গলাও। মেয়েটি বলছে, “পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু পড়তে বসলেই পরিবারের নানা সমস্যার কথা মাথায় চলে আসে। কী করব... কী করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাব?... বিশ্বাস করুন, আমি পড়তে চাই,” বলতে বলতে কেঁদে ফেলল সে।
মঞ্চে তখন জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার উমেশ খণ্ডবহালে। শুধু পুলিশকর্তাই নন, ‘টুলেভথ ফেল’ থেকে উঠে এসে দেশের সব থেকে কঠিন পরীক্ষায় পাশ করে তিনি এক কৃতীও। সে জন্যই শহরের পড়ুয়াদের ‘উদ্বুদ্ধ’ করতে তাঁর সঙ্গে এই আলোচনার আয়োজন।
সেখানে শুধু সেই ছাত্রী নয়, মন খুলে কথা বলল আরও বেশ কয়েক জন পড়ুয়া। উমেশ শুনলেন। সাধ্যমতো উত্তরও দিলেন। প্রথম ছাত্রীকে যেমন বললেন, “সমস্যা এড়িয়ে বা তার থেকে পালিয়ে মুক্তি পাওয়া যায় না। সমস্যার সঙ্গে লড়তে হয়। আমাকেও হয়। তুমি যে সমস্যার কথা সকলের সামনে বলতে পারলে, সেটাই প্রমাণ করে যে তোমার লড়াইয়ের শক্তি এবং সাহস আছে।” জেলার এক মহিলা পুলিশ আধিকারিককে ছাত্রীটির সব সমস্যা শুনে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার।
আর এক ছাত্রী বলল, “পরিবারের আর্থিক সমস্যা রয়েছে, আমি কি উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাব? আইপিএস হতে পারব?” উমেশ বলেন, ‘‘সরকারি স্কুলে পড়েও সাফল্য আসে, শুধু দরকার জেদ।’’ সরকারি বিভিন্ন বৃত্তি এবং পড়ুয়াদের জন্য প্রকল্প থেকে সুবিধা নেওয়ার কথাও পড়ুয়াদের বলেন তিনি। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র পুলিশ সুপারকে বলেন, “স্যর, আমার জীবনও অনেকটা আপনার মতো। পড়াশোনা করি, কিন্তু বাবার সঙ্গে কাজ করতে হয়। না হলে, আমাদের সংসার চলবে না। আমি কি পারব আইপিএস হতে?” তাকেও ভরসা দেন এসপি।
শহরের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ছিলেন জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাব আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে। এক শিক্ষিকা এসপি-র কাছে জানতে চান, “যে স্কুলে পড়াই, সেখানকার পড়ুয়াদের অনেকে প্রথম প্রজন্মে লেখাপড়া শিখছে। ওদের কী ভাবে অনুপ্রাণিত করব?” এসপি বলেন, ‘‘সবার ভিতরেই জেদ আছে। সেটা উস্কে দিতে হবে।’’ এক প্রধান শিক্ষিকা জানতে চান, পড়ুয়াদের মধ্যে যারা আইপিএস বা আইএএস হতে চায়, তাদের কী ধরনের শৃঙ্খলার অভ্যাস করানো উচিত।
প্রায় আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠান শেষে পুলিশ সুপার বলেন, “নিয়মে বাঁধা কাজের বাইরে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগল। ওদের যদি ভাল লেগে থাকে, তা হলেই বুঝব, আলোচনা সার্থক।”