অর্পিতা আর ইন্দ্রনীলের নীরব প্রেমের গল্প

এই ইশারাটুকুর জন্যই যেন অপেক্ষায় ছিলেন অর্পিতা। মঙ্গলবার দুই পরিবারের উপস্থিতিতে চার হাত এক হল। অর্পিতা এ বছরই বি টেক পাশ করেছেন। অন্য জন জাতীয় দলের হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্রিকেটে।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:৪৯
Share:

বিবাহ-বন্ধনে: ইন্দ্রনীল ও অর্পিতা

মেয়ে তখন অষ্টম শ্রেণি। ছেলে পড়ে এক ক্লাস উপরে।

Advertisement

স্কুলে যাওয়া-আসার মাঝেই চোখাচোখি, ইশারায় ভাব বিনিময়। এমনই চলছিল।

ইশারায় ‘কথা বলা’ ছাড়া অবশ্য উপায়ও ছিল না। দু’জনেই মূক ও বধির। মেয়ের মেধা দেখে ইছাপুরের ওই মূক-বধির স্কুলের শিক্ষকেরাও অবাক। তাঁদের পরামর্শে অভিভাবকেরা মেয়েটিকে ভর্তি করে দেন একটি সাধারণ স্কুলে।

Advertisement

জীবন ‘নিঃশব্দে’ এগিয়ে গেল দশ বছর। তবে ছেলেবেলার নানা রঙের দিনগুলি মনে গেঁথে ছিল দু’জনেরই। ব্যারাকপুর থেকে ট্রেনে সল্টলেকের কলেজে যাওয়ার পথে তরুণী মেয়ের চোখে পড়ে, এক সুদর্শন যুবক কয়েক দিন ধরে অনুসরণ করছেন তাঁকে। একদিন যুবকটি নিজেই এগিয়ে আসেন। পরিচয় দেন ইশারাতেই। জানা যায়, তিনিই অর্পিতার সেই হারিয়ে যাওয়া বন্ধু ইন্দ্রনীল।

এই ইশারাটুকুর জন্যই যেন অপেক্ষায় ছিলেন অর্পিতা। মঙ্গলবার দুই পরিবারের উপস্থিতিতে চার হাত এক হল। অর্পিতা এ বছরই বি টেক পাশ করেছেন। অন্য জন জাতীয় দলের হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্রিকেটে।

তবে লড়াইটা খুব সহজ ছিল না। অর্পিতার তখন এগারো মাস বয়স। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিলেন, শ্রবণশক্তি নেই মেয়ের। কথা ফুটবে কী করে! শ্রীরামপুরের ইন্দ্রনীলেরও ছোট থেকে একই সমস্যা।

আরও পড়ুন: অ্যাসিডে পোড়ার জ্বালা সয়ে অন্যদের ভরসা জোগাচ্ছেন ইনি

ইছাপুরের মূক-বধির স্কুল ছেড়ে সাধারণ স্কুল থেকে অসম এক লড়াই শুরু করেন অর্পিতা। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে পলিটেকনিকে ভর্তি হন। পরে লেদার টেকনোলজির প্রবেশিকা পরীক্ষায় দেশের মধ্যে নবম স্থান পান। বি টেক পাশ করে চাকরি পেলেও এম টেক পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আর ইন্দ্রনীলের লড়াই চলছিল বাইশ গজে। শ্রীরামপুরের ক্লাবে খেলার সময়ে সিএবি কর্তাদের নজরে পড়ে যায় কিশোরটি। বছর সাতাশের ইন্দ্রনীল এখন বাংলার মূক-বধির ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। জাতীয় দলের হয়ে বিদেশের মাটিতেও খেলতে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ বার সিএবি-র সাধারণ দলেও জায়গা করে নিয়েছেন। পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনা। স্নাতক হয়েছেন।

সানাইয়ের সুর কানে পৌঁছয়নি কারও। তবে শব্দহীন জগতের নায়ক-নায়িকারা ইঙ্গিতে জানালেন, দু’জনেই এত দিন অপেক্ষা করেছিলেন দু’জনের জন্য। ‘‘এ যেন সেই ‘কোশিশ’ ছবিতে সঞ্জীবকুমার-জয়া ভাদুড়ির গল্প,’’ স্মৃতি ছুঁয়ে গেলেন বিয়েতে আসা এক প্রবীণ অতিথি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement