অনুপ মাজি। —ফাইল চিত্র।
কয়লা পাচারে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালার ডায়েরিতে নামটা দেখে প্রথমে চমকে উঠেছিলেন ইডির তদন্তকারীরা। এ তো বলিউডের নামজাদা অভিনেতা! লালার লেনদেনের হিসাব রাখা ডায়েরির পাতায় তাঁর নাম এল কী ভাবে! রহস্যের মোড়ক খুলতেই দেখা যায়, ওই নাম আদতে এক পুলিশকর্তার। একই নাম, সঙ্গে পদবি লেখা না থাকায় বিভ্রান্তি।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে অভিযোগ, ২০১৭ থেকে ২০২০— এই চার বছরে লালার সঙ্গে অন্তত আট কোটি টাকার লেনদেনের নথি রয়েছে ওই পুলিশকর্তার। এমনকি এ কথা সম্প্রতি লিখিত ভাবে আদালতেও জানিয়েছে ইডি।
এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “ডায়েরির পাতায় ওই নাম দেখার পরে লালার ঘনিষ্ঠ একাধিক হিসাবরক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখনই জানা যায়, অভিনেতা নন, তিনি আসলে পুলিশকর্তা।” তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, এক সময়ে ওই পুলিশকর্তা বীরভূমে ছিলেন। ওই সময় থেকেই লালার সঙ্গে তাঁর লেনদেন শুরু। পরে অন্য জেলায় বদলি হয়ে গেলেও লালার কাছ থেকে ওই পুলিশ অফিসারের কাছে নিয়মিত টাকা পৌঁছত বলে তদন্তকারীদের সূত্রে অভিযোগ। ওই পুলিশকর্তার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি লালার কলকাতা ও সল্টলেকের অফিস থেকে টাকা নিয়ে গিয়ে তা তাঁর কাছে পৌঁছে দিতেন।
ওই পুলিশকর্তার সঙ্গে লালার লেনদেনের সমস্ত নথি সম্প্রতি দিল্লিতে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। অভিযোগ, সম্প্রতি হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ওই পুলিশকর্তার একাধিক সম্পত্তির নথি হাতে এসেছে ইডির। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, কয়লা পাচারের টাকা নির্মাণ ব্যবসাতেও ঢেলেছিলেন ওই পুলিশকর্তা। যদিও এখনও তাঁকে তলব করা হয়নি।
এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে সমস্ত তথ্য-প্রমাণ একত্রিত করা হচ্ছে। তাঁর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির হদিস করা হচ্ছে। সমস্ত নথি যাচাই ও একত্রিত করার পরে তাঁকে তলব করা হবে।”
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং বীরভূমে ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত কয়লা পাচারে রাজ্য পুলিশের বড় কর্তাদের একাংশ ও নিচুতলার ওসি ও আইসি মিলিয়ে প্রায় ১০০ জনের কাছাকাছি জড়িত। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০ জন পুলিশকর্তা এবং ২২ জন নিচুতলার পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে সম্পত্তির নথিও নেওয়া হয়েছে। অনেকের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে বলেও তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। ইডি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এই সব নথি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।