Uttar Dinajpur

‘ওই ভিডিয়ো দেখে শিউরে উঠছি নিজে’

শুক্রবার উত্তর দিনাজপুরে ‘নির্যাতিতার’ দেহ উদ্ধার হয় একটি পুকুরের ধার থেকে। তার পরে দেহ ময়না-তদন্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেখানে যায় পুলিশের একটি দল।

গৌর আচার্য 

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪৩
Share:

শুক্রবার উত্তর দিনাজপুরে ‘নির্যাতিতার’ দেহ উদ্ধার হয় একটি পুকুরের ধার থেকে। প্রতীকী ছবি।

তাঁর মেয়েও নাবালিকা। অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে যে মেয়েটির দেহ নিয়ে তাঁকে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োতে ছুটতে দেখা গিয়েছে (ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি), তার থেকেও হয়তো কিছুটা ছোটই হবে। তখন আলাদা করে কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এখন ওই ভিডিয়ো দেখে শিউরে উঠছেন বলে কবুল করছেন তিনি নিজেই।

উত্তর দিনাজপুরের ওই পুলিশ আধিকারিক রবিবার বলছিলেন, ‘‘আমার ছেলেমেয়েরও তো বয়স ওই মেয়েটির থেকে বেশি হবে না।’’ এবং এই কথা শুধু এক জনের নয়, ওই দলের অনেকেরই!

শুক্রবার উত্তর দিনাজপুরে ‘নির্যাতিতার’ দেহ উদ্ধার হয় একটি পুকুরের ধার থেকে। তার পরে দেহ ময়না-তদন্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেখানে যায় পুলিশের একটি দল। কিন্তু স্থানীয়েরা দেহটি আটকে ততক্ষণে পথে বসে পড়েছেন। গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। সেই বিক্ষোভ সামাল দিতে লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে। ছুড়তে হয় কাঁদানে গ্যাস। তারই মধ্যে থেকে কয়েক জন পুলিশকে মেয়েটির দেহ নিয়ে ছুটে চলে যেতে দেখা যায়। এমন একটি ভিডিয়ো পরদিন ভাইরাল হয় সমাজমাধ্যমে। তাকে ঘিরে দানা বাঁধে প্রবল বিতর্ক। তার পরেই পুলিশের বিরুদ্ধে অমানবিকতার অভিযোগ তুলে নিন্দা শুরু হয় প্রায় সব মহলে।

রবিবার সেই পুলিশকর্মীরা একান্ত আলাপে মানলেন, দৃশ্যটি সত্যিই শিউরে ওঠার মতো। ওঁদের মধ্যে এক জনের পায়ে বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইট এসে লেগেছিল বলে দাবি। কিন্তু তিনিও এ দিন মেনে নিয়েছেন, ‘‘এমনটা না হলেই ভাল হত।’’

ওই দলে আরও এক জন রয়েছেন, যাঁর মেয়েও এখনও নাবালিকা। সেই পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তার এক দিকের হাত ও পা রাস্তায় ঘষে যাচ্ছিল। তখন সে দিকে নজর দেওয়ার অবস্থা ছিল না। আমরা বিক্ষোভকারীদের হামলার হাত থেকে বাঁচতে ছুটছিলাম।’’ একটু থেমে তাঁর মন্তব্য, ‘‘(এখন) আমাদের খুব খারাপ লাগছে।’’

ওই ছয় পুলিশের মধ্যে যিনি সব থেকে প্রবীণ ও উঁচু পদমর্যাদার, তাঁর আক্ষেপ, “তিরিশ বছর ধরে পুলিশে কাজ করছি, কখনও এ ভাবে কোনও মৃতদেহ উদ্ধার করতে দেখিনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতির চাপে পড়ে আমাকে অন্যদের সঙ্গে সেই কাজ করতে হয়েছে। আসলে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে পুলিশকর্মীরা এমন কিছু করলেন, যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে অমানবিক হওয়ার অভিযোগ উঠল।’’ ওই ভিডিয়ো দেখে যে তাঁর নিজের পরিবারের লোকেরাও ক্ষুব্ধ, সে কথাও মানলেন তিনি।

কেন এমন কাজ করলেন?

এক জনের দাবি, জেলা পুলিশের কর্তারা সকাল থেকেই দ্রুত ওই নাবালিকার দেহ উদ্ধার করতে বলছিলেন। তাই প্রথম সুযোগেই দেহটি তুলে নিয়ে ছুটতে শুরু করেন তাঁরা। জেলা পুলিশ সুপারমহম্মদ সানা আখতার বলেন,

“পুলিশ বিক্ষোভকারীদের অনেক বোঝানো সত্ত্বেও তাঁরা মৃতদেহ দিতে অস্বীকার করেন। তাই, পুলিশকে জোর করে দেহ উদ্ধার করতে হয়।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, যে সমস্ত পুলিশ ওই নাবালিকার দেহ উদ্ধার করেছিলেন, তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্ভবত এই কারণে কিছুটা ভয়ও পাচ্ছেন ওই ছ’জন পুলিশকর্মী। তাই ঘটনা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করলেও, এ নিয়ে আর বেশি কিছু বলার বদলে মুখে কুলুপ আঁটছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন