Dilip Ghosh

দিলীপের জবান শুনে ক্ষোভ দলের অন্দরেই

নদিয়ায় পরপর দু’বার দিলীপ ঘোষের দুই ‘কীর্তি’ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বিজেপিরই একটা অংশ। 

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৬
Share:

দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র

নদিয়ায় পরপর দু’বার দিলীপ ঘোষের দুই ‘কীর্তি’ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বিজেপিরই একটা অংশ।

Advertisement

গত সপ্তাহে কৃষ্ণনগরে সভাস্থল থেকে প্রসূতির অ্যাম্বুল্যান্স ফেরানোর পরে রবিবার রানাঘাটের সভা থেকে ক্ষমতায় এলে কাউকে-কাউকে গুলি করার হুমকি দিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ। এ নিয়ে দলের এক সাংসদ ইতিমধ্যেই টুইটারে আপত্তির কথা জানিয়েছেন, তা সমর্থন করেছেন রাজ্যসভার এক সাংসদও।

নদিয়ায় বিজেপির বিভিন্ন পদে থাকা নেতারা নানা ভাবে দিলীপের ‘কীর্তি’ আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ চাপতে পারছেন না অনেকেই। রানাঘাট-সহ রাজ্যের নানা থানায় ইতিমধ্যে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। মঙ্গলবার নদিয়া বিজেপির এক জেলা সম্পাদক সোজাসুজিই বলেন, ‘‘দলকে শেষ করার জন্য দিলীপদার মতো এক জন নেতাই যথেষ্ট!’’

Advertisement

গত রবিবার অভিনন্দন যাত্রার শেষে রানাঘাট কলেজের সামনে এক সভায় দিলীপ মন্তব্য করেন, ‘‘অসম, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশে শয়তানদের গুলি করা হয়েছে। এখানে আসবে, থাকবে, খাবে আবার সরকারি সম্পত্তি ক্ষতি করবে! লাঠি মারব, গুলি করব, জেলে পাঠাব।’’ যা শুনে হাততালিতে ফেটে পড়েন সভায় হাজির বিজেপি সমর্থকদের বড় অংশই। রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অশোক চক্রবর্তীও তখন মঞ্চে হাজির ছিলেন।

এখন নেতার ওই বক্তব্য নিয়ে চারদিকে হইচই শুরু হওয়ায় কারও-কারও টনক নড়েছে। বিজেপির এক নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জেলা নেতা মঙ্গলবার বলেন, “সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে বিরোধী প্রচারের মোকাবিলা করার সময়ে এই সব বলে রাজ্য সভাপতি দলের মাজা ভেঙে দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে কথা বলা সমস্যা হচ্ছে। সামনেই পুর নির্বাচন। তৃণমূলের সুবিধা হয়ে যাচ্ছে। দলের কর্মীদেরও বিভিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।’’

প্রত্যাশিত ভাবেই, বিষয়টি নিয়ে নিন্দায় সরব হচ্ছেন বিজেপি-বিরোধী নেতারা। সিপিএমের রানাঘাট এরিয়া কমিটির সম্পাদক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই সংস্কৃতি বাংলার নয়। ওঁরা এই রাজ্যেও মাফিয়ারাজ কায়েম করতে চাইছেন। মানুষ তা মেনে নেবে না।’’ আরএসপি-র রানাঘাট লোকাল কমিটির সম্পাদক সুবীর ভৌমিকের মতে, “এটা কোনও সভ্য দেশে শোনা যায় না। পুলিশের ওঁকে গ্রেফতার করা উচিত।’’ এর আগে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের নানা কুকথার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘অনুব্রতের বক্তব্যের প্রতিবাদ যেমন জানিয়েছি, এই বক্তব্যেরও প্রতিবাদ করছি।”

রানাঘাটের পুরপ্রধান, তৃণমূলের পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, “এখানকার মানুষ এই ধরনের ভাষা শুনতে অভ্যস্ত নন। তাঁরা এ সব মেনে নেবেন না। সেই কারণেই দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে বলে শুনেছি।’’ রানাঘাট শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি পিন্টু সরকারের প্রশ্ন, “দিলীপ ঘোষ কি আবার একটা জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে চাইছেন?”

সে দিন দিলীপের পাশেই যিনি মঞ্চে হাজির ছিলেন, রানাঘাটের সেই বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার অবশ্য দাবি করছেন, “বক্তৃতা করতে গিয়ে দিলীপ ঘোষকে অভিযুক্ত হতে হয়েছে। অথচ, এ রাজ্যে সাধারণ মানুষ বিচার পায় না। পুলিশ রং বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement