subarnarekha river

Keshiary: জীবনতরী বাইছেন কাজল

সরকার থেকে আবাস যোজনার বাড়িও জোটেনি। কেউ সহযোগিতা করেনি? কাজলের ছোট্ট উত্তর, ‘‘আমাদের কথা কেউ শোনে না।’’ তবে ব্লক প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, তাদের দুয়ারে পৌঁছলে আবেদন শোনা হবে। কেশিয়াড়ির বিডিও বিপ্লব দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের জানালে সরকারি তরফ থেকে যতটা সহযোগিতার প্রয়োজন তা করা হবে।’’

Advertisement

বিশ্বসিন্ধু দে

কেশিয়াড়ি শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ০৬:২৩
Share:

বেশির ভাগ সময়েই পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করতে হয় কাজলকে। নিজস্ব চিত্র

বিঘাখানেক জমি ছিল। তা এখন সুবর্ণরেখার গর্ভে। বাবা অসুস্থ। কেশিয়াড়ির নছিপুর পঞ্চায়েতের ভসরার আটাঙ্গা এলাকার কাজল নায়েককে তাই নৌকা চালিয়েই হাল ধরতে হয়েছে সংসারের।

Advertisement

কাজলের বাবা শ্রীকান্ত নায়েকের নৌকা ছিল। সুবর্ণরেখায় মাছ ধরে, বালি ও গ্রাবলস্‌ তুলে চলত সংসার। স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার। বড় মেয়ে কাজল। শ্রীকান্তের বয়স হয়েছে। শরীরও অসুস্থ। বাবা-মাকে কে দেখবে? বাড়িতে দুই বোনের একজন ক্যানসার আক্রান্ত। প্রতিমাসে প্রায় পাঁচবার মেদিনীপুরে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। আর এক বোনের বিয়ের কথা চলছে। একাদশ শ্রেণিক পর পড়া বন্ধ। সংসারের চিন্তায় ঘুম আসত না কাজলের। কখনও ইটভাটায়, কখনও অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। রোজ কাজ জুটত না। বৃষ্টির সময় বন্ধ থাকত। তাই এখন নৌকার হাল ধরেছেন কাজল। বছর একত্রিশের কাজল বললেন, ‘‘পরিশ্রম তো করতেই হবে। নইলে হাঁড়ি চড়বে না। বোনের চিকিৎসাও।’’

শ্রীকান্তের বাড়ির পাশেই সুবর্ণরেখা। আগে নদীতে নৌকা চলত। কেশিয়াড়ির দিক থেকে ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রামে যেতে নৌকা ও ফেয়ারওয়েদার সেতুই ছিল ভরসা। এখন জঙ্গলকন্যা সেতু হয়ে তাদের আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। শ্রীকান্ত বলেন,‘‘মেয়ে হোক আর ছেলে, সংসার তো চালাতে হবে। এখন মাথার উপর বড় মেয়েই আমাদের ভরসা।’’ ভসরার নদীতে নৌকা চালিয়ে যা রোজগার হয় তাই দিয়েই সংসার চলে। ভসরা এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সুবর্ণরেখা নদী, ডাহি উদ্যান ও বিশেষ করে নদীর উপর নীল সাদা বেশ দীর্ঘ জঙ্গলকন্যা সেতুর আকর্ষণে বহু পর্যটক আসেন এখানে। পর্যটকদের অনেকেই নৌকায় চড়েন, ঘোরেন। কাজল বলেন, ‘‘সবদিন পর্যটক পাই না। আমি ঘরের বড়। কষ্ট হলে কী হবে! বাবা-মা আছেন। বোনেরা আছে। সংসার তো চালাতে হবে।’’ সরকার থেকে কোনও সাহায্য পাননি? পরিবারটি জানাচ্ছে, রেশন মেলে। শ্রীকান্তও বার্ধক্য ভাতা পান। তবে জোটেনি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’।

Advertisement

সরকার থেকে আবাস যোজনার বাড়িও জোটেনি। কেউ সহযোগিতা করেনি? কাজলের ছোট্ট উত্তর, ‘‘আমাদের কথা কেউ শোনে না।’’ তবে ব্লক প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, তাদের দুয়ারে পৌঁছলে আবেদন শোনা হবে। কেশিয়াড়ির বিডিও বিপ্লব দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের জানালে সরকারি তরফ থেকে যতটা সহযোগিতার প্রয়োজন তা করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement