প্রতীকী ছবি।
‘মানুষখেকো’ চিতাবাঘটি আসলে কোনটি, তা এখনও খুঁজে বার করা যায়নি। কিন্তু তার ভাগ্য নির্ধারণের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। বনমন্ত্রীকে এড়িয়ে এত তড়িঘড়ি সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে একটাই কারণ দেখছেন স্থানীয়দের অনেকে। তা হল, আসন্ন ভোট। যদিও বনমন্ত্রী বিনয় বর্মণ এ দিন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহের সঙ্গে বৈঠক শেষে জানান, চিতাবাঘকে মারতে কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি।
মাদারিহাট ব্লকের চারটি চা বাগানে গত কয়েক মাস ধরে চিতাবাঘের হানায় অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। সেই দলে চা বাগানের শ্রমিক এবং এলাকার জনজাতির লোকজন রয়েছেন। আছেন চা বাগানের কর্তাব্যক্তিরাও। অনেকেরই বক্তব্য, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো যাচ্ছে না। চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে শিশু ও বয়স্কদের।
চা বাগানের একটি অংশের দাবি, এই চিতাবাঘকে মানুষখেকো (এর মধ্যে শিশু-কিশোর মিলিয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে) আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলা হোক। কয়েক জন জানিয়েছেন, পারলে এলাকার সব চিতাবাঘ মেরে ফেলুক সরকার। তাতে স্বস্তি পাবেন স্থানীয় মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে রবিকান্তের একটি নির্দেশ থেকে বিভ্রান্তি ছড়ায়। সেই নির্দেশে ‘মানুষখেকো’ চিতাবাঘটিকে ধরা বা মেরে ফেলার নিদান দেওয়া হয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: ক্রিকেট মাঠে দিদি! উজ্জ্বল সচিন-সৌরভদের থেকেও
ঘটনাটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে ডুয়ার্সে। বিজেপির জনজাতি এবং চা বলয়ের নেতা জন বার্লা বলেন, “আমি চা বাগানের বাসিন্দা। বহু চিতাবাঘকে আতঙ্ক ছড়াতে দেখেছি। তাই বলে কখনও কেউ মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়নি। খাঁচা বসিয়ে বন্দি করাই সঠিক উপায়।” একই সঙ্গে তৃণমূলকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, “চিতাবাঘ কাকে মারল, তা নিয়ে মোহন শর্মারা কখনও কিছু বলেন না। লোকসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে বলেই এখন চিতাবাঘকে সরাতে ব্যস্ত হয়েছেন।’’
মোহন আবার আঙুল তুলেছেন চা বাগানের শ্রমিক ইউনিয়নগুলির দিকে। তাঁর কথায়, “চিতাবাঘকে নিয়ে কী করা উচিত, তা চা বাগানের ট্রেড ইউনিয়নস্তরের নেতারা ঠিক করবেন— এটা হতে পারে না। তার জন্যে বন দফতর রয়েছে।” কিন্তু চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের জিয়াউল আলম এ দিন বলেন, “চিতাবাঘ মেরে ফেলা কোনও কাজের কথা নয়। বরং রেডিয়োকলার পরিয়ে তার চলাফেরার উপরে নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি।”
চিতাবাঘটিকে মারার নিদান কী ভাবে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব ছিলেন মন্ত্রী বিনয় বর্মণ। এ দিন রবিকান্তের সঙ্গে বৈঠকের পরে তিনি বলেন, “চিতাবাঘ মারতে কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি। ওই উপদ্রুত এলাকা থেকে যে ক’টি চিতাবাঘ উদ্ধার হবে, তাদের আমরা সুস্থ অবস্থায় পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাব।”
কিন্তু স্থানীয় মানুষের রোষ বাঁধ মানছে কোথায়! ফালাকাটার রাইচেঙা গ্রামে এ দিন একটি চিতাবাঘ দাপিয়ে বেড়ায়। কয়েক জন জখমও হয়। পরে ঘুমপাড়ানি গুলি খেয়ে সেটি যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ে, স্থানীয়দের একাংশ তাকে পিটিয়ে মারে বলে অভিযোগ।