অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে নির্বাচনে হারের পর দিল্লিতে বসা বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে কার্যত কোণঠাসা হয়েই থাকতে হয়েছিল কংগ্রেসকে। জোটের আসন রফা নিয়ে ‘মতানৈক্য’ এবং রাহুল গান্ধী ও সনিয়া গান্ধীর সামনেই প্রধানমন্ত্রী-মুখ হিসাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম প্রস্তাব করে জোটের অন্দরে বহু প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়ালেরা। বাংলাতেও আসন নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের টানাপড়েন লেগেই রয়েছে। রাজ্যের কংগ্রেস নেতারাও দলের হাইকমান্ডকে তৃণমূল নিয়ে ‘অ্যালার্জি’র কথা জানিয়ে এসেছেন। এ সবের জেরে অচিরেই বিরোধী ঐক্যে চিড় দেখা দেবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে। এই আবহে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর জেলা মুর্শিদাবাদে ভাঙন ধরাল রাজ্যের শাসকদল। জোটের প্রশ্নে তার তীব্র নিন্দা করেছে কংগ্রেসও। তৃণমূলও পাল্টা জবাব দিয়েছে।
গত পঞ্চায়েত ভোটে মুর্শিদাবাদের নওদা ব্লকে বাম-কংগ্রেস জোট কেদারচাঁদপুর পঞ্চায়েত দখল করেছিল। লোকসভা ভোটের আগে সেই পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে নিল তৃণমূল। পঞ্চায়েতের এক কংগ্রেস সদস্য শাসকদলে নাম লেখানোয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় জোট। সোমবার রাতে নওদায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে গিয়ে ব্লক সভাপতি সফিউজ্জমান শেখের হাত থেকে জোড়াফুলের পতাকা নেন দলত্যাগী কংগ্রেস সদস্য পলাশ মণ্ডল।
কেদারচাঁদপুর পঞ্চায়েতে মোট আসন সংখ্যা ১৮। পঞ্চায়েত ভোটের পর বাম-কংগ্রেস যখন সেখানে বোর্ড গঠন করে, তখন তাদের সদস্য সংখ্যা ছিল ১১। আর সাত জন ছিলেন তৃণমূলের। গত শুক্রবার জোটের তিন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার যোগ দিলেন পলাশ। এর ফলে এখন তৃণমূলের হাতে রয়েছে ১১ জন। আর বাকি সাত জন জোটের সদস্য। যোগদানের পর তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে পারছিলাম না। তাই তৃণমূলে এসেছিল।’’ সফিউজ্জমানের হুঁশিয়ারি, ‘‘বাকি বিরোধী সদস্যেরাও খুব তাড়াতাড়ি তৃণমূলে নাম লেখাবেন।’’
কংগ্রেস সূত্রে খবর, দিল্লিতে জোট-বৈঠকের পর বাংলার নেতারা দলের হাই কমান্ডকে তৃণমূল নিয়ে ‘অ্যালার্জি’র কথা বলতে গিয়ে যে সব যুক্তি দিয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম— তৃণমূলের বার বার কংগ্রেসে ভাঙন ধরানোর এই প্রবণতা। বঙ্গনেতাদের দাবি, বাংলায় বিজেপির থেকে তৃণমূল অনেক বেশি ক্ষতি করেছে কংগ্রেসের। ২০০৯ সালের লোকসভা আসন থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট, কংগ্রেসের ক্ষতি করেই রাজ্যে আড়ে-বহরে বেড়েছে তৃণমূল। ফের কংগ্রেসে ভাঙন ধরানো নিয়ে জেলা মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘যেখানে বিরোধীরা জয়ী হয়েছে, সেখানে তাদের কাজ করতে দেবে না তৃণমূল। তাই বিরোধীদের চাপ দিয়ে দলে টানছে। যদিও জন্মলগ্ন থেকেই এই নীতি নিয়ে চলছে তৃণমূল। আর যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা দেখছেন, দইয়ের উপরটা না পেলেও অন্তত তলাটা তো পাব। তাই তৃণমূলে নাম লেখাচ্ছেন তাঁরা।’’ কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘‘বিষয়গুলি লোকসভা ভোটে জোটের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। আমরা ইতিমধ্যে হাইকমান্ডকে বিষয়গুলি জানিয়েছি।’’
পাল্টা তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যের বাম-কংগ্রেসের সদস্যেরা বেশির ভাগই বিজেপি ঘেঁষা। যাঁরা প্রকৃত বিজেপি বিরোধী, তাঁরাই তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন।’’