রিয়া কুমারী। ছবি: সংগৃহীত।
রাত ফুরোলেই দোল। অবাঙালি পরিবারে হোলি উদ্যাপনের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছিল। ঠিক সেই সময়ে উৎসব বর্ণহীন হয়ে গেল বাগুইআটি এলাকার বাসিন্দা এমনই একটি পরিবারের। আচমকা দুর্ঘটনায় বাড়ির সামনেই মৃত্যু হল পরিবারের সব চেয়ে ছোট কন্যাসন্তানের।
বাগুইআটির নারায়ণতলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। বাড়ির সামনে দাঁড় করানো একটি ই-রিকশায় উঠে সেটির ইঞ্জিনের চাবি ঘুরিয়ে দিয়েছিল রিয়া কুমারী (৭)। তাতে ঝটকা দিয়ে উঠে রিকশাটি এগিয়ে গিয়ে রাস্তার সামনে থাকা ট্রান্সফর্মারে সজোরে ধাক্কা মারে। যার জেরে ভেঙে পড়ে রিকশার কাচের খানিকটা অংশ। ছোট্ট রিয়া দেহের ভারসাম্য রাখতে না-পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রিকশায় লেগে থাকা কাচের উপরে। পুলিশ জানায়, সেই কাচে গলার নলি কেটে যায় ওই শিশুকন্যার। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আকস্মিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ রিয়ার পরিবার ও প্রতিবেশীরা। কথা বলার অবস্থায় নেই বাবা উদয়নারায়ণ পাণ্ডে ও মা মুন্নি পাণ্ডে।
রিয়ার বাবার খাটাল রয়েছে। তিনি দুধের ব্যবসা করেন। নারায়ণতলার একটি ছোট ঘরে থাকে পরিবারটি। ওই চত্বরেই থাকেন অটকেলাল পাণ্ডে। ই-রিকশাটি তাঁর। পুলিশ জানায়, অটকেলাল রিকশা দাঁড় করিয়ে বস্তা নামাচ্ছিলেন। একটু দূরেই খেলছিল রিয়া। অটকেলালের অজানতেই রিয়া রিকশায় উঠে সেটির চাবি ঘুরিয়ে দেয়। রিকশাটি ছিটকে গিয়ে আছড়ে পড়ে সামনে থাকা ট্রান্সফর্মারের উপরে। রিকশার কাচ ভেঙে পড়ে। আর শিশুটি হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেই ভাঙা কাচের উপরেই। তাতেই তার গলার নলি কেটে যায়।
রিয়ার আত্মীয়া গীতা রায় জানান, প্রতি সন্ধ্যায় রিয়া ঘরের সামনেই খেলত। রিকশাটিও ওই জায়গাতেই দাঁড় করানো থাকে। গীতা বলেন, ‘‘রিয়া আমার ভাইঝি। আমি ঘুমোচ্ছিলাম। লোকজনের চিৎকারে ঘুম ভাঙে। ঘরের বাইরে গিয়ে শুনি, রিয়ার দুর্ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রোজই তো রিকশাটি ওখানে দাঁড়াত। আজ ওর কী মনে হল, কেন রিকশায় উঠে চাবি ঘুরিয়ে দিল, কে জানে। আমাদের মাথা কাজ করছে না।’’
বছর দুই আগে রাজারহাটে একই রকম দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল একটি পাঁচ বছরের শিশুর। বাড়িতে সবে দুর্গাপুজো শেষ হয়েছে। উঠোনে দাঁড়ানো রিকশার চাবি ঘুরিয়ে দেওয়ায় ওই ভাবেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় শিশুটির। রিয়ার দাদা রোহিত জানান, তাঁরা হোলি পালন করার অপেক্ষায় ছিলেন। আচমকা দুর্ঘটনায় রঙের উৎসব বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে তাঁদের কাছে।
স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি আশুতোষ নন্দী বলেন, ‘‘পরিবারটি খুব একটা সচ্ছল নয়। আমি খবর পেয়েই পুলিশে ফোন করি। আমরা ওদের পাশে সব রকম ভাবে দাঁড়াব। কাল দোলের আগে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল, খুব খারাপ লাগছে।’’