আহত ওসি তুষার বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।
জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর। পথ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছিল পরিস্থিতি। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় ওসিযান ঘটনাস্থলে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের একাংশ শুরু থেকেই মারমুখী মেজাজে ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। বচসা গড়িয়ে যায় সংঘর্ষে। ওসি-সহ ৭ পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। ভাঙচুর চালানো হয়েছে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িতেও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বরূপনগর থানার দত্তপাড়া এলাকায় বুধবার সকালে একটি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ সীমান্তের দিক থেকে আসা একটি গাড়ি দত্তপাড়া মোড়ে এক ব্যক্তিকে ধাক্কা মারে। ইয়াকুব আলি মোল্লা নামে ওই ব্যক্তি স্থানীয় ব্যবসায়ী। রাস্তা পার হওয়ার সময়ে তিনি গাড়ির ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়েন। গুরুতর জখম ইয়াকুবকে দ্রুত শাঁড়াপুল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যে গাড়িটি ধাক্কা মেরেছিল, সেটিকে আটকে রাখেন স্থানীয়েরা।
দত্তপাড়ায় পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে জেনে বাহিনী পাঠিয়েছিল স্বরূপনগর থানা। পরে ওসি তুষার বিশ্বাস নিজেও ঘটনাস্থলে পৌঁছন। পুলিশ সূত্রের খবর, জখম ব্যক্তি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন বলে গুজব ছড়াতে শুরু করে এলাকায়। যাঁরা ওই গুজব ছড়াচ্ছিলেন, ওসি তাঁদের সতর্ক করার চেষ্টা করতেই পরিস্থিতি আরও তেতে ওঠে বলে খবর। ইট-পাথর নিয়ে পুলিশের উপরে হামলা চালানো হয়।
আরও পড়ুন: আরও কাছে আমপান, সাগরদ্বীপ থেকে এখন ৯০ কিমি দূরে
হামলায় ওসি তুষার বিশ্বাসের মাথা ফেটে যায়। জখম হন আরও ৬ পুলিশকর্মী। পুলিশের তিনটি গাড়িও ভেঙেচুরে দেয় মারমুখী জনতা। জখম পুলিশকর্মীদেরও শাঁড়াপুল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে যে গাড়িটিকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেটিকে এ সবের মাঝেও উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয় পুলিশ।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, গুজব ছড়ানোকে ঘিরে নয়, গাড়ি উদ্ধার করাকে কেন্দ্র করেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। যিনি দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন, তাঁর চিকিৎসার খরচ আদায় করার জন্যই গাড়ি আটকে রাখা হয়েছিল।কিন্তু পুলিশ চাইছিল গাড়িটিকে থানায় নিয়ে যেতে, তার জেরেই হামলা— দাবি স্থানীয়দের একাংশের।
পুলিশকর্মীদের চোট যথেষ্ট গুরুতর হওয়ায় স্থানীয় হাসপাতালে তাঁদের সম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব হয়নি বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিলেন, তাঁকেও বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: আমপান কতটা ভয়ঙ্কর? ছবি পাঠালো নাসার উপগ্রহ ‘অ্যাকোয়া’
পুলিশের উপরে যে হামলা হয়েছে, তা স্বীকার করেছেন বসিরহাটের পুলিশ সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে তিনি জানিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, হামলার পরে দত্তপাড়া মোড় ছেড়ে থানায় ফিরে গিয়েছে বাহিনী। সেখানে আর নতুন করে পুলিশ মোতায়েন সম্ভব হয়নি।