টানা বৃষ্টিতে পশ্চিম বর্ধমানের গুসকরায় ভেসে গিয়েছে কজ়ওয়ে। বন্ধ যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।
অতিগভীর নিম্নচাপটি ক্রমশ রাজ্যের পশ্চিম ভাগ দিয়ে ঝাড়খণ্ডের উপরে সরছে বলে জানাল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। আজ, সোমবার সেটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে আবহবিদেরা জানান। এর জেরে পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ডে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। রবিবারও গাঙ্গেয় বঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণে বহু এলাকা জলমগ্ন। বাঁকুড়া ও পূর্ব বর্ধমানে মাটির বাড়ি ভেঙে ও জলে ডুবে মোট চার জনের মৃত্যু হয়েছে। সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ কাকদ্বীপ ও ডায়মন্ড হারবারের তিনটি ট্রলার।
বাঁকুড়ার পুলিশ সূত্রে খবর, সোনামুখীর দক্ষিণশোলের বুলেট টুডু (৩৬) শনিবার রাতে স্থানীয় বাঁধে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন। রবিবার দেহ মেলে। তালড্যাংরার বেলশুলিয়ার শ্যামসুন্দর সিংহ (৪৬) রবিবার গ্রামের পুকুরে স্নানে নেমে বৃষ্টিতে জল বেড়ে যাওয়ায় ডুবে যান, দাবি পরিবারের। বাঁকুড়ার হরিয়ালগাড়ার জ্যোৎস্না বাগদির (৫০) মৃত্যু হয়েছে রান্নাঘরের মাটির দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে। পূর্ব বর্ধমানের দেবশালার ছোট রামচন্দ্রপুরেও মাটির দেওয়াল ভেঙে মৃত্যু হয়েছে বেণু রুইদাসের (৭০)।
শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বহু মাটির বাড়ি ভেঙেছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রামে বেশ কিছু কজ়ওয়ে জলের তলায়। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর একটি গাড়ির উপরে গাছ ভেঙে কয়েক জন আহত হয়েছেন। হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে ১১ হাজার ভোল্টের তারে গাছ পড়ে এলাকা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন থাকে বেশ কিছু ক্ষণ। পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে একটি বাসের উপরে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে। তবে কেউ হতাহত হননি। হুগলির চুঁচুড়ার নানা এলাকায় জল জমে রয়েছে।
বনগাঁয় প্রায় তিন হাজার পরিবার জলবন্দি। বসিরহাটে বিদ্যাধরী ও বুড়ি নদীর বিভিন্ন জায়গায় নদীবাঁধ দুর্বল। হিঙ্গলগঞ্জে গৌড়েশ্বর নদীবাঁধে প্রায় ৪০ ফুট অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। নামখানায় হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীবাঁধে নানা জায়গায় ধস নেমেছে। বকখালি ও গঙ্গাসাগরে সমুদ্রস্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, “সুন্দরবনের কিছু জায়গায় দুর্বল বাঁধ মেরামত করছে সেচ দফতর। দুর্যোগ কাটলে বাকি বাঁধে কাজ হবে।”
মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের পুঁটিমারি সেতুর কাছে শনিবার গভীর রাতে জাতীয় সড়কের ৫০ মিটার বসে যায়। ডাকবাংলো থেকে ঝাড়খণ্ডের পাকুর যাওয়ার একমাত্র রাস্তায় বিঘ্নিত হয় যান চলাচল। মেদিনীপুরের একাংশে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিলাবতী ও ঝুমি নদী উপচে জলমগ্ন ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা। খালের জল উপচে ঝাড়গ্রাম-গোপীবল্লভপুর রাস্তা ও বেলপাহাড়িতে নদী উপচে ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য সড়ক বিচ্ছিন্ন। টানা বৃষ্টিতে আনাজ, পান ও ফুলচাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। রবিবার পুজোর বাজার মার খেয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অনেকের দাবি।
ডিভিসি সূত্রে খবর, রবিবার মাইথন থেকে প্রায় ৬ হাজার কিউসেক ও পাঞ্চেত থেকে প্রায় ২০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে রবিবার সন্ধ্যায় ৫১,৪০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়।