সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জেরে এ রাজ্যে বন্ধ হয়ে গেল প্রায় ২৪০০ মদের দোকান। আবগারি দফতর অবশ্য শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে দেশের অন্য বহু রাজ্যেও এ দিন থেকে বিপুল সংখ্যক মদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
পশ্চিমবঙ্গের আবগারি কর্তারা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যের ৬০% মদের দোকান এবং অন শপ (যেখানে বসে মদ খাওয়া যায়) রয়েছে জাতীয় ও রাজ্য সড়কের ধারে। সর্বোচ্চ আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, রাজস্বের চেয়েও মানুষের জীবন বেশি মূল্যবান। সে কারণেই এগুলির ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও মদের দোকান রাখা যাবে না। অনড় সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবারই সাফ জানিয়ে দিয়েছে— শুধু বার কিংবা পাব নয়, জাতীয় সড়ক থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোথাও মদ বিক্রিই করা চলবে না। যদিও যে সব এলাকার জনসংখ্যা ২০ হাজারের কম, সেখানে এই দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে ২২০ মিটার করার ব্যাপারে ছাড় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তাতে খুব বেশি লাভ হবে বলে মনে করছে না রাজ্য প্রশাসন। আবগারি কর্তারা বলছেন, জাতীয় বা রাজ্য সড়কের ধারে যে সব দোকান রয়েছে, তা ১০০ থেকে ২০০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে। ফলে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে শনিবার থেকেই বেশির ভাগ দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এর ফলে যে পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হবে, অর্থ দফতর তা অন্য ভাবে তোলার চেষ্টা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শীর্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞার জেরে আবগারি শিল্পে একই রকম ভরাডুবির আশঙ্কায় ভুগছে গোয়া, কেরল, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্য। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মানতে শনিবার সকাল থেকেই তৎপর হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসন। আবগারি কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে রাস্তার ধারে সব মদের দোকানই নিষিদ্ধ। তার পরেও কেউ তা না মানলে তা আদালত অবমাননার সামিল। পুলিশ দোকানদারকে গ্রেফতার করলে সরকারের কিছু করার থাকবে না।
এ বছর ৪০০০ কোটির বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আবগারি দফতর। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে মাথায় হাত সরকারের। রাজ্যের অর্থ কর্তারা জানাচ্ছেন, রাস্তার ধারের দোকান থেকেই মদ বিক্রি হতো সবচেয়ে বেশি। ফলে মাসে ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার যে গড় রাজস্ব আসে, তা এপ্রিল থেকে ধাক্কা খেতে শুরু করবে। তবে কী পরিমাণ রাজস্ব কমবে, তা এখনই আন্দাজ করতে পারছেন না অর্থ দফতরের কর্তারা।
কেউ বলছেন, জাতীয় ও রাজ্য সড়কের ধারের দোকান বন্ধ হওয়ায় শহরের দোকানে ভিড় বাড়বে। সেখানে পর্যাপ্ত জোগান নেই। ফলে অচিরেই রাজ্যে মদের আকাল দেখা দেবে। যে ২৪০০ দোকানদারের ব্যবসায় ঝাঁপ পড়ল, সরকার কি তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করবে, না দূরবর্তী স্থানে দোকান খোলার ব্যবস্থা করে দেবে— সেই প্রশ্নও ঘুরছে প্রশাসনের অন্দরে।
একই ভাবে ভুগছে অন্য বহু রাজ্যও। তবে সবচেয়ে বেশি হাহাকার গোয়ায়। সুরা-বিলাসী পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য গোয়ায় সরাসরি কোপ পড়তে চলেছে প্রায় ৩ হাজার খুচরো-পাইকারি মদের দোকান ও রেস্তোরাঁ-পাবে। মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রীকরকে ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার আর্জি জানিয়েছেন গোয়ার মদ-বিক্রেতা সংগঠনের নেতারা। তাঁদের কথায়, ‘‘পাহাড়ি এবং বনাঞ্চল বলে মেঘালয়, সিকিম, হিমাচল প্রদেশকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই ছাড় আমাদেরও প্রাপ্য। তার চেয়েও বড় কথা— গোয়ার এমন অনেক এলাকা রয়েছে, যেখানে সমুদ্র থেকে জাতীয় সড়কের দূরত্ব ৩৫০ মিটারও নয়। এ ক্ষেত্রেও কি একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে?’’
দিশাহারা উত্তরপ্রদেশও। আজই নয়ডার জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে থাকা ৪৬টি দোকান-পাব বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। সূ্ত্রের খবর, মাপজোকের পর দোকান-রেস্তোরাঁর ঝাঁপ বন্ধ করা শুরু হয়েছে মহারাষ্ট্রেও। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের জেরে বছরে রাজ্যের অন্তত ৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হতে চলেছে বলে আজ বিধানসভায় দাবি করেন রাজ্যের শুল্ক মন্ত্রী। অন্য অনেক রাজ্যের মতো বিকল্প আয়ের রাস্তা খুঁজছে মহারাষ্ট্রও।