নির্বাচন কমিশনের কাছে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুরের প্রার্থী-পদ খারিজের দাবি তুলল তৃণমূল। মঙ্গলবার গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের ধ্যানেশনারায়ণ গুহ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার ও বনগাঁ লোকসভার উপনির্বাচনের রির্টানিং অফিসারের কাছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৫ জানুয়ারি সুব্রত ঠাকুর ই-মেল করেন গাইঘাটার বিডিও পার্থ মণ্ডলের কাছে। তাতে তিনি সমিতির সদস্য পদ ত্যাগ করার কথা জানিয়ে দেন। বিডিও ই-মেলের আবেদনটি বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের কাছে ফরওয়ার্ড করে দেন। কিন্তু ই-মেলে লেখার কিছু ত্রুটি থাকায় এবং নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মেলটি না করায় সুদীপবাবু ওই মেলটি ফের বিডিওকে পাঠান। প্রশাসনের তরফে সে কথা জানিয়েও দেওয়া হয় সুব্রতকে। কিন্তু তারপর সুব্রতবাবু আর উচ্চবাচ্য করেননি বলে জানিয়েছেন বিডিও ও মহকুমাশাসক। পদত্যাগ করতে চেয়ে আর কোনও আবেদনও করেননি তিনি। পার্থবাবুর বক্তব্য, “পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, পঞ্চায়েত সমিতির কোনও সদস্য যদি পদত্যাগ করতে চান তা হলে তাঁকে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হয়। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ মহকুমা শাসক।” সুদীপবাবুর কথায়, “সুব্রতের এখনও সমিতির সদস্য পদ খারিজ হয়নি। আর তা ছাড়া, সুব্রত আমাকে আবেদন জানাননি।”
“প্রার্থী-পদ খারিজ হবে কিনা, তা ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন।
ওই বিষয়ে আইন আইনের পথে চলবে। আমরা সুব্রত বা বিজেপি
সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করব না।” —জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক
“পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে তৃণমূল ভয়ে এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে।
প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।
তাঁরা জানিয়েছেন, কোনও অসুবিধা হবে না।” —সুব্রত ঠাকুর
এই যুক্তিতেই তাঁর প্রার্থী-পদ খারিজের দাবি তুলেছে তৃণমূল।
লিখিত অভিযোগে ধ্যানেশবাবু জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুব্রত ঠাকুর গাইঘাটা ব্লক থেকে তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী হয়ে গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ওই সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ না করে আসন্ন লোকসভার উপনির্বাচনে বিজেপির প্রতীকে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। ধ্যানেশবাবুর কথায়, “সংবিধানের ১০ নম্বর ধারা অনুযায়ী সুব্রতর প্রার্থী পদ খারিজের দাবি করেছি। কারণ, একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে সেখান থেকে পদত্যাগ না করে অন্য রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানো যায় না। এ ক্ষেত্রে সুব্রত পদত্যাগ না করে অন্য দলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন।”
সুব্রত ঠাকুর অবশ্য বলেন, “আমি নিয়ম মেনেই পদত্যাগ করেছি। তৃণমূলের মধ্যে এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে আমার বিরুদ্ধে কিছু বলতে না পেরে তৃণমূল অপ্রচার শুরু করেছে।” তাঁর কথায়, “নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে তৃণমূল ভয়ে এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে। প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, কোনও অসুবিধা হবে না।”
কী বলছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব?
দলের জেলার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার বলেন, “অতীতে এ রাজ্যে নেতা-মন্ত্রীরা বিশেষ করে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে গিয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। তৃণমূলের ক্ষমতা থাকলে সুব্রতর প্রার্থী-পদ খারিজ করে দেখাক। সুব্রত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই মহকুমাশাসককে ই-মেল করে পদত্যাগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সেই প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “প্রার্থী-পদ খারিজ হবে কিনা, তা ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। ওই বিষয়ে আইন আইনের পথে চলবে। আমরা সুব্রত বা বিজেপি সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করব না।” যদিও জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (এলআর) তথা বনগাঁ লোকসভা নির্বাচনের রির্টানিং অফিসার বিজিতকুমার ধর বলেন, “সুব্রত ঠাকুরের বিরুদ্ধে প্রার্থী পদ খারিজের যে অভিযোগ উঠেছে, তা ওই নিয়মের মধ্যে পড়ে না। দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।”