গায়ের ঝাল এখনও মেটেনি।
আজ, রবিবার তৃণমূল সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের সংবর্ধনা। তার আগে শনিবার, ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির রান্নাঘরের তালা খোলাকে কেন্দ্র করে কপিলের সঙ্গে তাঁর ভাই, রাজ্যের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণের কোন্দল ফের প্রকাশ্যে এল।
এ দিন রান্নাঘরের তালা খুলে কাঠ রাখতে যাচ্ছিলেন কপিল-ঘনিষ্ঠ মতুয়াভক্ত সমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। সেই সময়ে তাঁকে জুতোপেটা, কটূক্তি এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল মঞ্জুলবাবুর ছেলে সুব্রতের বিরুদ্ধে। সুব্রত অভিযোগ মানেননি। কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মী এবং মতুয়া-ভক্তদের একাংশ মনে করছেন, সুব্রত লোকসভা ভোটে টিকিট না পাওয়ায় এ ভাবে গায়ের ঝাল মেটালেন।
সুব্রতর বাবা মঞ্জুলবাবুও ছেলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ মানতে চাননি। এ দিনের ঘটনা ‘চক্রান্ত’ বলেই তাঁর দাবি। ক্ষোভ উগরে তিনি বলেন, “দাদা-বৌদি ছেলের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। দাদা সাংসদ হতে পারেন, কিন্তু ওঁর মাথার ঠিক নেই। ও অস্থিরমতি। আগেও আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।”
কপিলবাবু পাল্টা বলেন, “ভাই একটা আস্ত নির্বোধ। ওর কি বিদ্যাবুদ্ধি আছে যে মন্ত্রী হয়েছে?”
দুই ভাইয়ের এই বিরোধের ছাপ যাতে দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে না পড়ে তাঁর জন্য কপিল এবং মঞ্জুলকেই আলোচনা করে তা মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, “দুই ভাইয়ের উচিত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া। আলোচনায় বসলে নিশ্চয়ই সমস্যা মিটবে।”
মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবীর (বড়মা) সংসারে তাঁর দুই ছেলের এই বিরোধ নতুন নয়। অতীতে সম্পত্তি এবং মতুয়া মহাসঙ্ঘের মধ্যে কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধ বেঁধেছিল দু’ভাইয়ের। সেই বিরোধের মাত্রা কমেছে, কখনও বেড়েছে। তাঁর ঘরে তালা দিয়ে দেওয়া এবং তাঁর সাইকেল ঠাকুরবাড়ির পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ তুলে মঞ্জুল এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানারও দ্বারস্থ হয়েছিলেন কপিলবাবু। এমনকী, মতুয়া ধর্মমেলায় যে সব দোকান বসে, তার আর্থিক ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েও দু’ভাইয়ের বিরোধ প্রায় প্রতি বছরই সামনে আসে।
এ বার লোকসভা ভোটে ছেলে সুব্রতকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন মঞ্জুলবাবু। ‘বড়মা’ সুব্রতর নাম প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন করলেও পরে কপিলের পক্ষেই মত দেন। তৃণমূল নেতৃত্ব কপিলকেই প্রার্থী করলে মঞ্জুল ক্ষোভে ফেটে পড়েন। নেতৃত্বের চাপে প্রচার-পর্বে তাঁকে মাঝেমধ্যে দেখা গেলেও তিনি মন থেকে দাদাকে সমর্থন করেননি বলেই মত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের।
আজ, রবিবার দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মতুয়া ধর্মাবলম্বীরা ঠাকুরবাড়িতে এসে সাংসদ হওয়ার জন্য কপিলবাবুকে সংবর্ধনা দেবেন। সেই অনুষ্ঠানেরই তোড়জোড় চলছিল ঠাকুরবাড়িতে। সে জন্য ভক্তরা চাল-ডাল পাঠাচ্ছিলেন। কপিলবাবুর স্ত্রী মমতাবালাদেবী জানিয়েছেন, জ্বালানি কাঠ রাখার জন্য তিনিই শনিবার রান্নাঘরের চাবি সমেন্দ্রর হাতে দেন। কিন্তু সেই কাঠ রাখতে গিয়েই তাঁকে হেনস্থা হতে হয়। সমেন্দ্র গোটা ঘটনা জানান কপিলবাবুকে। তাঁর পরামর্শে তিনি গাইঘাটা থানার সুব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, একটি সাধারণ ডায়েরি করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মমতাবালাদেবী বলেন, “সমেন্দ্র নয়। আসল গোলমাল আমাদের সঙ্গে। ওরা (মঞ্জুলবাবুরা) আমাদের বাড়ি থেকে তাড়াতে চায়।”
পক্ষান্তরে, সুব্রতবাবু দাবি করেছেন, রান্নাঘরের চাবি তাঁদের কাছেই থাকে। কয়েক মাস ধরেই রান্নাঘর থেকে জিনিসপত্র খোয়া যাচ্ছে। এ দিন রান্নাঘর খোলা জানতে পেরে তিনি গিয়ে দেখেন, সমেন্দ্র তালা দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছেন। সমেন্দ্র পড়েও যান। তিনি বলেন, “আমি গিয়ে দেখি রান্নাঘরের তালাতে নকল চাবি লাগানো। জেঠামশাই এবং জেঠিমা আমাদের হেয় করতেই অভিযোগ করিয়েছেন পুলিশে।”
‘বড়মা’র সংসারে ফের গৃহযুদ্ধের ইঙ্গিত পাচ্ছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।