রবিবারের প্রচার। উপরে বাঁ দিকে, জায়েন্ট স্ক্রিনে খেলা দেখছেন তৃণূমল প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাস। ডান দিকে, প্রচারে বেরিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী মৃণাল চক্রবর্তী। নীচে বাঁ দিকে, মিছিলে সামিল শমীক ভট্টাচার্য। ডান দিকে, কংগ্রেস নেতা অসিত মজুমদার। ছবি: নির্মল বসু।
হাতে আর কয়েকটা মাত্র দিন। তারপরেই বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর। এরপরেই স্পষ্ট হয়ে যাবে দীর্ঘ ৩৭ বছর এক টানা সিপিএমের হাতে থাকা আসনটি কার হাতে যাবে।
রবিবার ছুটির দিনে সকাল থেকেই প্রচারে বেরিয়ে পড়েছিল সব ক’টি দল। সকলেরই বক্তব্য, এই কেন্দ্রকে ‘পাখির চোখ’ করে এগোচ্ছেন তাঁরা। এ দিন সকালে তৃণমূলের দীপেন্দু বিশ্বাস, সিপিএমের মৃণাল চক্রবর্তী এবং বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য গিয়েছিলেন টাকি পুর এলাকায় প্রচারে। টাকি শ্মশানের ধারে পুরপ্রধান সোমনাথবাবুর উদ্যোগে জায়েন্ট স্ক্রিনে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বি ম্যাচ দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দীপেন্দু। প্রচার শেষে এলাকার অনেককে সঙ্গে নিয়ে পুরো খেলা দেখেন তিনি। তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে বসিরহাটে কর্মিসভায় এসেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, “গত চার মাসেই মোদীর ভাঁওতা মানুষ ধরে ফেলায় মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে।”
এ দিন বসিরহাট টাউনহলে খাদ্য আন্দোলনের ৫৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ছাত্র-যুব-মহিলাদের এক কর্মশালায় আসেন রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম প্রার্থী মৃণাল চক্রবর্তীকে পাশে বসিয়ে তিনি বলেন, “গাজার বিষয় নিয়ে তিন মিনিট বলতে গিয়ে একজন সাংসদ এগারো বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করেন। ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি বড় বিপদের।” সারদা প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করেন সিপিএম সাংসদ। আরও বলেন, “মোদী-মমতা সব এক। এ রাজ্যে মোদীকে মমতাই নিয়ে এসেছে।” সিবিআই তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ঋতব্রতর মন্তব্য, “যে কোনও সময়ে তৃণমূল কিন্তু বিজেপির সঙ্গে মিশে যেতে পারে। তাই কখন কী হয়, তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। না আঁচালে বিশ্বাস নেই।” সিপিএম নেতৃত্ব এ দিন প্রার্থীর সমর্থনে বসিরহাটে কয়েকটি সভা করেন। বাড়ি বাড়িও প্রচার হয়।
বিকেলের দিকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ডাকা চক্ষুদান নিয়ে সচেতনতামূলক মিছিলে হাঁটতে দেখা গেল কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মজুমদারকে। সারা দিন টাকি এবং বসিরহাটে প্রচার করেছে কংগ্রেস। দিনভর প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যও। শমীকবাবুর সমর্থনে এ দিনে বসিরহাটে আসেন দলের নেতা তথাগত রায়।
বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে ১ ব্লকের ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৮ হাজার এবং টাকি ও বসিরহাট দু’টি পুরসভার ৩৮টি ওয়ার্ড। প্রায় ১ লক্ষ ২ হাজার ভোটার। গত লোকসভা ভোটে বিধানসভা-ভিত্তিক ফলাফলে এই কেন্দ্রে বিজেপির শমীক ভট্টাচার্যের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৭৬,৫৭৭। তৃণমূলের ইদ্রিস আলি পেয়েছিলেন ৪৬,৩৫৪টি ভোট। ব্যবধান ছিল ৩০,২২৩টি ভোটের। অথচ, গত ২০১১ সালে বিজেপির প্রার্থী হাজারিলাল সরকার মাত্র ৭২৮২টি ভোট পেয়েছিলেন এই কেন্দ্রে। সে বার সিপিএমের নারায়ণ মুখোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৬৬,৯১৪টি ভোট। তৃণমূলের নারায়ণ গোস্বামী দৌড় শেষ করেছিলেন ৫৪,৫১৪টি ভোট পেয়ে। নির্দল প্রার্থী হয়েও অসিতবাবু পেয়েছিলেন ৫২,৪৮৪টি ভোট।
প্রচারে অন্য দলগুলি যে ভাবে বিজেপিকেই প্রধান প্রতিপক্ষ ধরে নিচ্ছে, তা থেকে স্পষ্ট, বিজেপির এই উত্থানে অশনি সঙ্কেত দেখছেন সকলে। তার উপরে শমীকবাবুকেই বিধানসভায় বিজেপি মনোনয়ন দেওয়ায় তা কপালে বাড়তি ভাঁজ ফেলেছে বাকি তিন দলের। কী ভাবে বিজেপি এত ভোট পেল, তার চুলচেরা হিসাব কষতে ব্যস্ত তৃণমূল-কংগ্রেস-বাম শিবির। সিপিএম জেলা সম্পাদক গৌতম দেব আগেই এখানে এসে বলে গিয়েছেন, “কংগ্রেস-তৃণমূল নয়, আমাদের প্রধান বিপদ বিজেপি।” প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী আবার এই উপনির্বাচনকে কংগ্রেসের ‘মর্যাদার লড়াই’ বলে গিয়েছেন।
শমীকবাবু বলেন, “তৃণমূলের স্বরূপ বুঝতে কারও আর বাকি নেই। ওরা ভয় পেয়ে গিয়েছে। আর বাকিদের অবস্থা তো বলার মতোই নয়। কংগ্রেস দলটার আদৌ অস্বিস্ত আছে কিনা, টের পাওয়া যাচ্ছে না। আর সিপিএম তো ভাঙতে ভাঙতে তলানিতে।”