পরিকাঠামোগত নানা সমস্যার অভিযোগে কলেজের শিক্ষকদের তালাবন্ধ করে আটকে রেখে দিল টিএমসিপি সমর্থক ছাত্রছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের সুকান্ত কলেজে। ঘণ্টা তিনেক বাদে পুলিশ গিয়ে শিক্ষকদের ঘেরাওমুক্ত করে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কলেজটি ২০০৮ সালে রাজ্য সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু নানা কারণে এখনও উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। এ নিয়েই কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আন্দোলনে নামে টিএমসিপি। তাঁরা প্রশ্ন তোলে, এত দিনেও কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নেই কেন? ভবনের মেঝে হয়নি কেন? তাঁদের দাবি, কলেজে খেলার মাঠ পর্যন্ত নেই। এ সবের দায় নিয়ে কলেজের ‘অর্গানাইজিং কমিটি’র সভাপতি লোকমান মোল্লার পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভকারীরা।
কলেজের টিএমসিপি নেতা, বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র মঞ্জুর ইলাহি গাজি বলেন, “এক জন স্থায়ী অধ্যক্ষ নেই। উন্নয়ন খাতের প্রচুর টাকা এসে পড়ে রয়েছে। সেই টাকা খরচ হচ্ছে না। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। যতক্ষণ পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ এ সব নিয়ে সদুত্তর না দেবেন, আমাদের আন্দোলন চলবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক অতিথি শিক্ষক বলেন, “মঞ্জুর নিজে নিয়মিত ক্লাস করে না। কলেজে এসে গোলমাল করাই যেন ওর কাজ।” চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক সুশান্ত মজুমদার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাঁর ক্ষোভ, “জনা কয়েক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনায় মন না দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।” তিনি জানান, এর আগে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। পড়ুয়াদের আচরণ ছাত্রসুলভ না হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেছেন।
লোকমান মোল্লার দাবি, সরকারি অনুমোদন পেলেও এখনও পর্যন্ত কলেজ সার্ভিস কমিশন থেকে নিয়মিত অধ্যক্ষ বা শিক্ষক দেওয়া হয়নি। দু’জন চুক্তিভিত্তিক, চার জন আংশিক সময়ের এবং কয়েক জন অতিথি শিক্ষককে নিয়ে কলেজ চালানো হচ্ছিল। কিছু দিন আগে ছাত্রদের আচরণে মর্মাহত হয়ে রফিকুল ইসলাম ইস্তফা দেন। দু’জন অতিথি অধ্যাপকও চলে যান। উচ্চশিক্ষা দফতর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন দফতরে অধ্যক্ষ-সহ অন্য শিক্ষক চেয়ে আবেদন করেও ফল হচ্ছে না।
কলেজ সূত্রের খবর, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা গৃহ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু স্থায়ী অধ্যক্ষ বা কমিটি না থাকায় কাজ শুরু করা যায়নি। কিছু দিন আগে অর্গানাইজিং কমিটি ঠিক করে, মহকুমাশাসক তথা কলেজের ডিডিও-র কাছে আবেদন করা হয়, যাতে সরকারি কোনও সংস্থাকে দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়। মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “কলেজের উন্নয়ন খাতের টাকা এসে যে পড়ে রয়েছে, তা আমার নজরে এসেছে। ওই টাকা খরচ করা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছেন। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।”