ব্রাজিল ব্রাত্য, বন্দিরা এখন মজে আর্জেন্টিনায়

বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ব্রাজিল হারার পর থেকেই কে কোন দল, তা নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি বন্ধ। বসিরহাট সংশোধনাগারের প্রায় সব বন্দিই এখন আর্জেন্টিনার সমর্থক।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০২:১৮
Share:

বন্দিদের চোখ টিভিতে। —নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ব্রাজিল হারার পর থেকেই কে কোন দল, তা নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি বন্ধ। বসিরহাট সংশোধনাগারের প্রায় সব বন্দিই এখন আর্জেন্টিনার সমর্থক।

Advertisement

বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য মাসখানেক আগেই সংশোধনাগারের বন্দিদের জন্য টিভির ব্যবস্থা করা হয়েছিল মহকুমাশাসক ও জেল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে। ছ’টি ঘরে ছ’টি টিভি বসেছে। টাকা না নিয়েই টিভিতে এক মাসের জন্য কেব্ল সংযোগ দিয়েছেন অপারেটর। বিশ্বকাপ দেখতে পেয়ে খুশি বন্দিরা।

বসিরহাট সংশোধনাগারে বর্তমানে তিনশো বন্দি আছেন। বিশ্বকাপ শুরুর আগে এক বন্দি সংশোধনাগারের মধ্যে টিভির ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন জানান জেল সুপারের কাছে। জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে রাজি হয়ে যান মহকুমাশাসক শেখর সেনও। ব্যবস্থা হয় টিভির। কে কাকে সমর্থন করবেন, সে নিয়ে আগে মতানৈক্য থাকলেও ব্রাজিল হেরে যাওয়ার পরে অবশ্য বন্দিদের বেশিরভাগই আর্জেন্টিনার সমর্থক হয় গিয়েছেন। বন্দিদের কথায়, “এই এক মাস দারুণ কাটছে। মনে হচ্ছে না জেলে আছি।”

Advertisement

ফাইনালের আগের দিন আর্জেন্টিনাকে নিয়ে উন্মাদনা দেখা গেল বন্দিদের মধ্যে। এক কয়েদি, হাড়োয়ার আটপুকুর গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন মোল্লার কথায়, “প্রথম দিকে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্রাজিলের সমর্থক ছিল। খেলা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে ব্রাজিল সেমিফাইনালে হারার পর থেকে সকলেই আর্জেন্টিনার জয় চাই।” বসিরহাটের মৃন্ময় গোলদার বলেন, ‘‘জেলের ভিতর এমন হবে, ভাবতে পারিনি। আগে রাত হলেই শুয়ে পড়তে হত। এক মাস ধরে রাত জেগে ফুটবল দেখে আনন্দ পেয়েছি।”

এমনিতে অবশ্য সংশোধনাগারের ভিতর ধর্মীয় অনুষ্ঠানের রেওয়াজ রয়েছে। তবে সংশোধনাগারে ফুটবলের অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। বাংলাদেশের খুলনায় বাড়ি কুতুবউদ্দিন খালকের। তাঁর কথায়, “জেলের ভিতর এত দিন ধর্মীয় চর্চা হত। কিন্তু বিশ্বকাপও যে হবে, তা ভাবিনি। এমনিতে চার দেওয়ালে বন্দি। তবে টিভিতে মেসি, নেইমারদের দেখতে দেখতে মনে হচ্ছে, বাড়িতেই রয়েছি। আজেন্টিনা, নাকি পশ্চিম জার্মানি কে জিতবে, তা নিয়ে আলোচনা করে আমাদের দিন কেটে যাচ্ছে।” বসিরহাট সংশোধনাগারের সুপার তরুণকান্তি দাস বলেন, ‘‘ভাগ্যের ফেরে পড়ে, বা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনার জেরে ওঁদের এখানে আসতে হয়েছে। কিন্তু তা বলে স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত হবেন, সেটা কাম্য নয়। তাই এমন উদ্যোগ।’’

অন্য দিকে, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। সেই সঙ্গে রবিবার ফাইনাল খেলার দিন নানা রকম প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্লাবগুলি। বেশিরভাগই আর্জেন্টিনার সমর্থক। মারাদোনা-ম্যাজিকে মজে বাঙালি মোটামুটি এখনও আর্জেন্টিনার প্রবল ভক্ত। তার উপরে ব্রাজিল শিবির মুখ থুবড়ে পড়ায় এখন মেসি ভক্তদেরই রমরমা। জার্মানির তেমন সমর্থক চোখে পড়ে না। যারা নানা তাত্তিক কারণে জার্মানিক স্বপক্ষে যুক্ত-টুক্তি দিতে যাচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগ স্রেফ বাকিদের দাবড়ানি খেয়ে চুপ করে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে ফাইনাল সকলে জমিয়ে দেখতে চান। কথা হচ্ছিল বনগাঁর বাসিন্দা সুব্রত বক্সির সঙ্গে। পেল্লায় ৪০ ইঞ্চির এলসিডি টিভি কিনেছেন বিশ্বকাপ উপলক্ষে। আত্মীয়-বন্ধুদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন রবিবার। এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে খেলা দেখবেন। ক্লাবগুলি মেসির ছবিতে ছয়লাপ। বনগাঁ-হাবরা-অশোকনগরের রাস্তায় রাস্তায় বিশাল বিশাল নীল-সাদা পতাকা ঝুলছে আর্জেন্টিনার। সব মিলিয়ে হইহই রইরই কাণ্ড। বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল বলে কথা।

মাঠে নামবেন মেসি। আবেগে ভাসছে বনগাঁ। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

তবে সোমবার অফিস। সারা রাত খেলা দেখে পর দিন সকালে পৌঁছনো মুশকিল বলে জানালেন অশোকনগরের বাসিন্দা অমিতাভ সাহা। ছুটি নিয়ে রেখেছেন সোমবার। বললেন, “ছেলেটাকেও পর দিন স্কুলে পাঠাব না। খেলাটা ভাল করে দেখুক।”

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তেও সাজো সাজো রব। আর্জেন্টিনার পতাকা-মেসির ছবি বিকোচ্ছে দুড়দাড় করে। ক্যানিংয়ের বাসিন্দা সৌরভ সরকার বললেন, “রবিবার মাংস আনব। রাতে কফির ব্যবস্থাও রাখছি। সারা রাত খেতে খেতে খেলা দেখব।”

ডায়মন্ড হারবারের এক ক্লাবের সম্পাদক গৌতম মণ্ডল ওরফে নন্টে জানালেন, এক মাস ধরে তাঁরা জায়েন্ট স্ক্রিনে খেলা দেখাচ্ছেন। প্রতি দিন আড়াই-তিনশো লোক আসে। ফাইনাল খেলাটা অন্য ভাবে উপভোগ করতে চান তাঁরা। নন্টে জানান, সন্ধে থেকে অনেকে ঘুমে ঢুলে পড়েন। সে জন্য রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে। পিকনিক হবে। হাজার খানেক লোক খেলা দেখতে আসবেন বলে তাঁর আশা।

সহ প্রতিবেদন: দিলীপ নস্কর ও সীমান্ত মৈত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement