নীতীশ।
অস্বাভাবিক মৃত্যু হল অর্থলগ্নি সংস্থার এক এজেন্টের। ফলতার সহরা গ্রামের ওই ঘটনায় মৃত এজেন্টের নাম নীতীশ হালদার (৩৮)। বুধবার সকালে বাড়ি-লাগোয়া নিজের হোমিওপ্যাথি চেম্বারে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দ’শেক ধরে বাড়ি-লাগোয়া একটি ঘরে হোমিওপ্যাথি চেম্বার চালাতেন নীতীশবাবু। বছর তিনেক ধরে ‘মঙ্গলম অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড’ নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টের কাজও করছিলেন। সহরাহাট মোড়ে সংস্থাটির অফিস ছিল। গ্রামের বেশ কিছু মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু সারদা-কাণ্ডের পরপরই বন্ধ হয়ে যায় সংস্থাটি। নিজে ধার-দেনা করে গ্রাহকদের বেশ কিছু টাকা মিটিয়েছিলেন নীতীশবাবু। মৃতের পরিবারের দাবি, পাওনাদারদের নিয়মিত তাগাদার জেরে হতাশা ও আতঙ্কে ভুগছিলেন ওই যুবক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে টাকা চাইতে এসেছিলেন বেশ কিছু স্থানীয় আমানতকারী। টাকা না পেয়ে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। গালিগালাজ করা হয় নীতীশবাবুকে। এমনকী, পর দিন সকালে টাকা না পেলে তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
এ দিন নীতীশবাবুর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, অঝোরে কেঁদে চলেছেন নীতীশবাবুর বিধবা মা মনিমালাদেবী ও স্ত্রী মধুমিতা। মৃতের বড় মেয়ে বছর বারোর লিজার মুখে কোনও কথা নেই। দোলনায় ঘুমোচ্ছে আট মাসের মেয়ে পৃথা। মধুমিতাদেবী বলেন, “মাস ছ’য়েক ধরেই গ্রামের কয়েকজন আমানতকারী বাড়িতে এসে গালিগালাজ করছিল। স্বামীকে মারধর করে আমাকে ও আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিচ্ছিল। এ দিন সকালে উঠে ওকে না দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি বাইরে বেরোই। চেম্বারের দিকে নজর পড়তেই ওঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখি।” টাকা ফেরত দেবেন কী ভাবে, তা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই উদ্বেগের মধ্যে কাটাচ্ছিলেন স্বামী, জানিয়েছেন মধুমিতা।
ভেঙে পড়েছেন মা।
তবে এই ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা, এমনকী আমানতকারীদের একাংশও। নীতীশবাবুর প্রতিবেশী তথা ওই সংস্থার আমানতকারী বিমল হালদার, রমেন হালদারদের বক্তব্য, “কম সময়ে মোটা টাকা পাব বলেই লগ্নি করেছিলাম আমরা। কিন্তু কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে এজেন্টদেরই বা কী করার রয়েছে?” তাঁদের সংযোজন, “সরকার হস্তক্ষেপ না করলে এমন অবস্থা চলতেই থাকবে।”
ছবি: দিলীপ নস্কর।