প্রায় ১০ মাস ধরে বনগাঁ মহকুমা আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারে (ফাস্ট ট্র্যাক ১) পদ খালি। ফলে মাঝপথে থমকে গিয়েছে বহু মামলা। ব্যহত হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়া।
খুন, ধর্ধণ, পনের দাবিতে খুন, ধর্ষণ করে খুন, নাশকতার প্রচুর মামলা জমে রয়েছে ওই এজলাসে। সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী তথা সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের সম্পাদক বরুণ বিশ্বাস হত্যা মামলাও এখানেই চলছে। নাশতকতামূলক কাজকর্ম চালানোর অভিযোগে লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি সন্দেহে ধৃত ৪ জনেরও বিচার চলছে এই এজলাসে। কিন্তু বিচারক না থাকায় মামলার শুনানি হচ্ছে না। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক ২) নীলাঞ্জন দে অস্থায়ী ভাবে ওই এজলাসে বসছেন। কিন্তু তাতে পূর্ণ সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ হচ্ছে না।
আইনজীবী মহলের বক্তব্য, ওই এজলাসের বিচারক না থাকায় বিচারধীন বন্দিরা কার্যত বিনা বিচারে আটকে রয়েছেন। আইনজীবীরাও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আদালতের মুখ্য সরকারী আইনজীবী সমীর দাস বলেন, “বরুণ হত্যা সহ তিনশোরও বেশি মামলার শুনানি বিচারক না থাকায় বন্ধ রয়েছে। অভিযুক্তদের আদালতে হাজিরার দিনে নিয়ে আসা হচ্ছে, আবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীরা আইনজীবীদের কাছে হতাশা ও ক্ষোভ জানাচ্ছেন।” বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি হাইকোর্ট এবং রাজ্য সরকারের কাছে জানিয়ে দ্রুত বিচারক পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থীরা চাইছেন, অবিলম্বে ওই পদে বিচারক নিয়োগ করা হোক।
২০১২ সালের ৫ জুলাই গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে গুলিতে খুন হন বরুণ। ওই মামলার মূল অভিযোগকারী তথা বরুণের দাদা অসিত বিশ্বাসের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বিচারকের অভাবে তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি এখনও। অসিত বলেন, ‘‘আমরা চাই দ্রুত বিচারক আসুন। শুনানি ফের শুরু হোক। তবে কেন বিচারক আসছেন না, বলতে পারব না। সরকার বলতে পারবে।”
২০১২ সালের এপ্রিল মাসে গোপালনগরের সাতবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল হক মণ্ডলের মেয়েকে জামাই বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে দেহ রেল লাইনে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত মোমিনুর হোসেন মণ্ডল গ্রেফতার হয়।। মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস জানান, বিচারক না থাকায় মাস দু’য়েক আগে ওই যুবক জামিন পেয়ে যায়। সিরাজুল প্রায়ই স্ত্রীকে নিয়ে সমীরবাবুর কাছে আসতেন। হাতের সামনে আর কাউকে না পেয়ে তাঁকেই দ্রুত বিচারক আনার ব্যবস্থা করার কথা বলছেন।
মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মুখে বিষ ঢেলে মেয়েকে খুনের অভিযোগ করেন বনগাঁর সভাইপুরের বাসিন্দা রাধুরাম সরকার। সেই মামলাটিও এই আদালতে চলছে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রূপার শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে গ্রেফতার করে। তাঁরাও অবশ্য জামিন পেয়ে গিয়েছেন। রাধুরামবাবুও বিচারকের সমস্যা মেটানোর জন্য বারে বারে সরকারী আইনজীবীর কাছে দরবার করছেন।