এই মোটর বাইকের মধ্যে থেকেই উদ্ধার হয়েছে সোনা। ইনসেটে, সাজিয়ে রাখা হয়েছে ১১৫টি বিস্কুট। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
চার কোটি টাকার সোনা উদ্ধার হল পেট্রাপোল সীমান্ত-সংলগ্ন কলঘর এলাকা থেকে। বিএসএফের গোয়েন্দা শাখার দেওয়া খবরের ভিত্তিতে ৪০ নম্বর ব্যাটালিয়নের হরিদাসপুর ক্যাম্পের জওয়ানেরা বুধবার সকালে অভিযান চালান। উদ্ধার হয় ১১৫টি সোনার বিস্কুট, যার ওজন প্রায় তেরো কেজি। বাজার দর প্রায় ৪ কোটি টাকা। বিএসএফ সূত্রের খবর, জানুয়ারি মাস থেকে সোনার বিস্কুট পাচারের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া বিস্কুটের মূল্য প্রায় ৯ কোটি টাকা।
বিএসএফ কর্তারা জানিয়েছেন, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ খবর আসে, বাংলাদেশ থেকে সোনার বিস্কুট ঢুকবে এ দেশে। সেই মতো জওয়ানেরা ওত পেতে ছিলেন। পৌনে ১০টা নাগাদ তাঁরা দেখতে পান, স্থানীয় কালিয়ানি ও পিরোজপুর গ্রামের মাঝে কলঘর এলাকা দিয়ে এক যুবক বাইক চালিয়ে আসছে। জওয়ানেরা পিছু নিতেই সে বাইক পাশের খেতের মধ্যে ঢুকে পড়ে। জওয়ানেরা তাড়া করলে বাইক ফেলে রেখে পাশের একটি খালে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। বাইকের সিটের তলায় বিস্কুটগুলি ছিল। ওই পাচারকারীর সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে বিএসএফ।
পুলিশের একাংশের অনুমান, এত দিন যে সব সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়েছে, তা ভিনদেশ থেকে পাচার করে আনা হত। কিন্তু এ দিন যে বিস্কুটগুলি মিলেছে, তা গরু পাচারের টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছিল। গরু পাচারকে কেন্দ্র করে ভারত-বাংলাদেশের পাচারকারীদের মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়। বড় অঙ্কের নগদ টাকা আনা-নেওয়ায় ধরপাকড়ের আশঙ্কা বেশি থাকে। সে জন্যই ইদানীং টাকার বদলে বিস্কুটের মাধ্যমে কারবার চলছে। ছোট ছোট বিস্কুট আনা অনেক সহজ। ধরা পড়ার আশঙ্কাও কম। বিএসএফের ৪০ নম্বর ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডান্ট এমকে ঝা বলেন, “গরু পাচারের কারবারে টাকার পরিবর্তে সোনার বিস্কুট ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন ধারণার কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি না। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে বলতে পারবে। এ দিন উদ্ধার হওয়া সোনার বিস্কুট শুল্ক দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
পেট্রাপোল সীমান্ত ও সংলগ্ন এলাকা দিয়ে সোনার বিস্কুট পাচার হওয়াটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিএসএফ ও শুল্ক দফতরের হাতে বাংলাদেশ থেকে বিস্কুট আনার সময় বেশ কিছু পাচারকারী ধরা পড়েছে। সীমান্ত বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। কখনও সাইকেলের টায়ারের মধ্যে করে, কখনও বা পায়ু ছিদ্রের মধ্যে করেও বিস্কুট পাচারের চেষ্টা হয়েছে। পাচারকারীদের কাছে পেট্রাপোল কার্যত নিরাপদ করিডরে পরিণত হয়েছে। দুবাই থেকে ঢাকা হয়ে বিস্কুট এ দেশে ঢুকছে বলে জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বনগাঁ থেকে বিস্কুট কলকাতার বড়বাজার-সহ নানা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।