নাসিরুদ্দিন ফিরে এল নিজের ভাঙাচোরা ঘরেই

চোখের জলে নাসিরুদ্দিনকে বিদায় দিলেন নাসিমা বিবি। অভাবের সংসারে সদ্যোজাত ছেলেকে মানুষ করতে পারবেন না, এই যুক্তিতে ছেলেকে নিঃসন্তান নাসিমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন মিনু বিবি ও তাঁর স্বামী আরিফ মোল্লা। কিন্তু আনন্দবাজারে সেই খবর প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১১
Share:

এই শিশুকে বড় করারই চিন্তা বাবা-মায়ের। নিজস্ব চিত্র।

চোখের জলে নাসিরুদ্দিনকে বিদায় দিলেন নাসিমা বিবি।

Advertisement

অভাবের সংসারে সদ্যোজাত ছেলেকে মানুষ করতে পারবেন না, এই যুক্তিতে ছেলেকে নিঃসন্তান নাসিমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন মিনু বিবি ও তাঁর স্বামী আরিফ মোল্লা। কিন্তু আনন্দবাজারে সেই খবর প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। আরিফকে এ ভাবে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের তরফে। বুধবারই সকালে দেগঙ্গার হাদিপুর ১ পঞ্চায়েতের পশ্চিম হাদিপুর গ্রামের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা আরিফ আর মিনু ছোটেন নাসিমার বাড়িতে। তিনি ছিলেন বাপের বাড়ি বারাসতের গোলাবাড়ির জিরেনগাছায়। নাসিমা আর তাঁর স্বামী হাফিজুল শিশুটিকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না। অনেক কথার পরে শেষমেশ রাজি হয়ে যান। চোখের জলে ভাসতে ভাসতে শিশুটিকে তার জন্মদাতা বাবা-মা।রে হাতে তুলে দেন নাসিমা-হাফিজুলেরা।

অভাবের কারণেই হাজার দশেক টাকা আর কিছু জামাকাপড়ের বিনিময়ে পঞ্চম সন্তান নাসিরুদ্দিনকে তাঁরা নাসিমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বলে অস্বীকার করেননি মিনু-আরিফেরা। মিনু এ দিন বলেন, “কেউ কী শখে পড়ে নিজের ছেলে পরের হাতে তুলে দেয়? এই ভাঙা ঘরে কী ভাবে ছেলেটাকে মানুষ করব? ও তো মরেই যাবে। এ সব ভেবেই তো বাধ্য হয়ে ছেলেকে পরের হাতে তুলে দিয়েছিলাম।” পাঁচ সন্তানের জননী মিনুর কথায়, “ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার জোগাতে গিয়ে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারি না। বৃষ্টি হলে ভাঙা ঘরের চাল দিয়ে হু হু করে জল পড়ে। এ সব তো কেউ চোখে দেখেন না। শুধু আইনটাই বড় হল?” আরিফে বলেন, “চরম অভাবের সংসার। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে নিজেদেরই যখন ঠিক মতো খেতে পাই না। তাই পঞ্চম সন্তানকে মানুষ করতে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের থেকে বলে গেল, ছেলেকে এ ভাবে ছেড়ে দিলে জেল হতে পারে। তা শুনে ওকে নিজের কাছেই ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হলাম।”

Advertisement

এমন ঘটনা জানার পরেও প্রশাসন কিংবা কোনও দলের স্থানীয় নেতারা গ্রামে না আসায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। আরিফরা চরম দরিদ্র হলেও বিপিএল তালিকা নাম ওঠেনি। গ্রামের বাসিন্দা খলিল মণ্ডল, অহাব মোল্লারা বলেন, “আমরা গরিব বলেই তো গ্রামে কারও দেখা নেই। অথচ ভোটের ঘণ্টা বাজতেই কত নেতাদের আনাগোনা বাড়ে। প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। এখন একটা অসহায় পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানোর কেউ নেই।” তাঁরা জানান, গ্রামের মানুষ ঠিক করেছেন, নিজেরাই চাঁদা তুলে বাঁচিয়ে রাখবেন শিশুটিকে। কিছুতেই তার ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না।

দেগঙ্গার বিডিও মানসকুমার মণ্ডল বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে পরিবারটি যাতে চাল ও অন্য খাবার পায়, তার চেষ্টা করা হবে। ওই পরিবারটি যাতে ঘর পায়, সে জন্যও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হবে।” সব শুনে রীতিমতো বিস্মিত বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি। তিনি বলেন, “পরিবারটি যাতে আর্থিক সাহায্য পায়, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে বলা হয়েছে। সরকারি ভাবে চাল-গম পাওয়ার ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও জানানো হয়েছে।” ঘর তৈরির বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরিবারটিকে তিনি সাধ্যমতো সাহায্য করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement