কমলা নামে এই মহিলাই গৌতমকে খুনের সুপারি দিয়েছিল। জনতা ধরে ফেলে অন্য এক যুবককে। বুধবার ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।
এক জোড়া ছাগল বিক্রি করে ৫ হাজার টাকা জোগাড় করেছিল প্রৌঢ়া। সেই টাকায় খুনের বরাত দেয়। কাজ হাসিল হলে আরও ২৫ হাজার টাকা দেবে বলে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে রফা হয়েছিল।
সেই ছক মতোই মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ পূর্ব রেলের বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার গুমা ও বিড়া স্টেশনের মাঝে ২২ নম্বর রেলগেট এলাকায় দুই দুষ্কৃতী মিলে গৌতম দাস (২৬) নামে এক যুবককে পিটিয়ে খুন করে। দেহ রেললাইনের উপরে ফেলে ট্রেনে কাটা পড়া বলে চালানোর চেষ্টায় ছিল তারা। কিন্তু ডাউন বনগাঁ লোকালের আলোয় কয়েক জন দেখতে পান, রক্তাক্ত এক যুবকের দেহ চ্যাংদোলা করে লাইনের উপরে ফেলার চেষ্টা করছে দুষ্কৃতীরা। ধাওয়া করে ধরা হয় সঞ্জিত দাস নামে এক দুষ্কৃতীকে। তাকে মারধর করে পুলিশে দেওয়া হয়। সঞ্জিতকে জেরা করেই হদিস মেলে কমলাঋষি দাস নামে আমডাঙার আদহাটার এক মহিলার। জানা যায়, গৌতমকে খুনের বরাত দিয়েছে সে-ই। বছর পঞ্চান্নর কমলাকে বুধবার সকালে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে ২০০৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর কমলার ছেলে প্রশান্ত খুন হন। ওই ঘটনায় ধরা পড়ে আমডাঙারই জয়পুর-দাসপাড়ার বাসিন্দা গৌতমের বাবা রঘু দাস। জামিনে ছাড়া পেয়ে ভিনরাজ্যে চলে যায় রঘু। মামলাটি এখনও বিচারাধীন। রঘু সাজা না পাওয়ায় সেই রাগেই তার ছেলে গৌতমকে খুনের ছক কষে কমলা। স্থানীয় দুষ্কৃতী কৃষ্ণর সঙ্গে ৩০ হাজার টাকায় রফা হয়। কিন্তু অত টাকা কাছে ছিল না মহিলার। বাড়ি বাড়ি কাপড় ফেরি করে সামান্য রোজগার। নিজের দু’টো ছাগল বিক্রি করে ৫ হাজার টাকা জোগাড় করে কমলা। অগ্রিম পেয়ে কাজে নেমে পড়ে কৃষ্ণ। সঙ্গে নেয় বছর উনিশের সঞ্জিতকে।
গুমা ও বিড়া স্টেশনের মাঝামাঝি এই পরিত্যক্ত কেবিনে বসেই মদ্যপান করেছিল গৌতমরা।
পরে তার মাথায় মদের বোতল মেরে, পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করে দুই দুষ্কৃতী। বুধবার ছবি তুলেছেন শান্তনু হালদার।
পুলিশ জানিয়েছে, সঞ্জিতের সঙ্গে আগে আলাপ ছিল গৌতমের। তাকে ডেকে এনে লাইনের পাশের একটি পরিত্যক্ত রেলের কেবিনে বসে মদ খায় তিন জন। গৌতমের নেশা হয়ে গেলে মাথায় মদের বোতল দিয়ে ঘা মারে। পরে লাইনের ধারের পাথর দিয়েও মাথা থেঁতলে দেয়।
বুধবার সকালে বনগাঁ জিআরপি থানায় দাঁড়িয়ে কমলা বলে, ‘‘ছেলের খুনির শাস্তি হবে না, সেটা মেনে নিতে পারছিলাম না। ভাবলাম, যার উপরে রাগ, তার ছেলেটাকেই তো মেরে দিলে হয়।”