প্রচণ্ড গরমে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জল না মেলায় চরম সঙ্কটে পড়ছেন সুন্দরবনের সাধারণ চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে এমনিতেই ব্যবহারযোগ্য জলের সমস্যা। গরমের সময় তা প্রবল আকার নেয়। বিগত সরকার এবং বর্তমান সরকার সমস্যা দূরীকরণের জন্য নানা প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোটের বাজারের সে সমস্ত ভুরিভুরি প্রতিশ্রুতি বস্তুত ফাঁকা আওয়াজ মনে হয় এখন তাঁদের।
ক্যানিং মহকুমার ক্যানিং-১, ২, বাসন্তী, গোসাবা ব্লকের কোথাও সেচের ব্যবস্থা নেই। গরমে চাষ-বাস বিপুল পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই চারটি ব্লকের কিছু কিছু জায়গায় চাষিরা নিজেদের উদ্যোগে জমিতে শ্যালো মেসিন বসিয়ে চাষের জল তোলেন। কিন্তু গরমের সময় জলস্তর নেমে যাওয়ায় তাতেও জল উঠতে চায় না।
বিগত বাম সরকারের আমলে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খনন, খাল সংস্কার করে বর্ষার জল ধরে রেখে সেই জলে চাষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্প নেওয়া হয়। চাষিদের অভিযোগ সরকারের ওই পরিকল্পনা সুন্দরবনে বাস্তবায়িত হয়নি।
ক্যানিং-২ ব্লকের নেতড়া গ্রামের চাষিরা অভিযোগ করেন, “সরকার বলেছিল সুন্দরবনের দ্বীপে পুকুর খুঁড়বে, খাল সংস্কার করবে। বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। আমরা ক্ষুদ্র চাষিরা যে সমস্যায় ছিলাম, এখনও সেখানেই আছি।”
মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজগুলি এগ্রি-ইরিগেশন, ইরিগেশন ও সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের করার কথা। প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “আমরা অনেকগুলি পুকুর খনন ও খাল সংস্কার করেছিলাম। পরবর্তী সরকার সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেনি। ফলে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় সেচের সমস্যা রয়ে গিয়েছে।”
সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য তথা জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি শৈবাল লাহিড়ি সেচের জলের সমস্যার কথা কার্যত মেনে নেন। তা ছাড়াও তিনি বলেন, “আমরা ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পে সারা জেলায় ১৮ হাজার পুকুর খনন করেছি। ক্যানিংয়ের হাটপুকুরিয়া অঞ্চলে ৬ কিলোমিটার খালও কাটা হয়েছে পর্ষদের মাধ্যমে।” তিনি আরও জানান, অন্যান্য এলাকার জন্য পুকুর খনন ও খাল সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মহকুমার সহ কৃষি অধিকর্তা তরুণ মণ্ডল বলেন, “মহকুমার ৪টি ব্লকে ১২০টি পুকুর খনন ও ২০ হাজার মিটার খাল সংস্কার করা হয়েছে দফতরের পক্ষ থেকে। এ ছাড়াও, ন্যাশনাল ওয়াটার শেড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাসন্তীতে প্রায় ৯০০ পুকুর খনন করা হয়েছে। সুন্দরবনের জন্য আরও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে সেচের সমস্যা সমাধানের জন্য।” এত আশ্বাসেও যদিও হতাশা কাটছে না সুন্দরবনবাসীর।