মঞ্চে মন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
সুন্দরবন দিবসের অনুষ্ঠানে এসে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গ্রামোন্নয়নের কাজ আশানুরূপ হয়নি বলে মন্তব্য করে গেলেন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সামনে তখন স্থানীয় বিধায়ক, দলের নেতা, পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতিও ছিলেন। তাঁরা উন্নয়নের ফিরিস্তি দেওয়া শুরু করলেও মাঝপথে থামিয়ে সুব্রতবাবু বলেন, “কাজ কিছু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আরও হওয়া দরকার।”
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। পাথরপ্রতিমা ব্লক অফিসে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রতবাবু। মঞ্চে বক্তৃতা করার আগে তিনি বলেন, “বর্ধমান বা নদিয়ার মতো জেলাগুলি গ্রামোন্নয়নের ক্ষেত্রে যে ভাবে এগিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এখনও তা পারেনি। টাকার অভাব না থাকা সত্ত্বেও কাজ সে ভাবে এগোচ্ছে না।” সামনেই ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের সমীর জানা। ছিলেন তৃণমূল পরিচালিত পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আব্দুল রেজ্জাক মোল্লা-সহ অনেকে।
রেজ্জাক বলেন, “পাথরপ্রতিমা দ্বীপ এলাকা। এখানে কাজের নানা অসুবিধা আছে। বিশেষত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় জল ঢুকে থাকায় সমস্যা হয়।” সেই সমস্যার কথা অবশ্য অস্বীকারও করেননি সুব্রতবাবু। যদিও তিনি বলেন, “জেলার নানা প্রান্তে এখনও অনেক গ্রামোন্নয়নের কাজ বাকি।” বিধায়ক সুর তুলেছিলেন উন্নয়নের খতিয়ান নিয়ে। বলতে চেয়েছিলেন, তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু মন্ত্রী আবারও বলেন, “আরও অনেক কিছু করার আছে।” এই প্রসঙ্গেই ইন্দিরা আবাস যোজনা, নলকূপ বসানো, শৌচালয় তৈরির মতো প্রকল্পগুলিতে আরও জোর দিতে বলেন সুব্রতবাবু। একশো দিনের কাজেও গতি আনার কথা বলেন। মন্ত্রীর কথায়, “নির্মল গ্রাম আমরা ৮০০ থেকে বাড়িয়ে গোটা রাজ্য প্রায় ১২০০ তৈরি করেছি। এই জেলায় সেই কাজও আরও হওয়া দরকার।” নিজের বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে সুব্রতবাবু জানান, পড়শি দেশে নদীবাঁধের উপর দিয়ে বড় বড় গাড়ি চলে। বাঁধগুলি এতটাই পাকাপোক্ত। এখানেও যাতে এ ধরনের বাঁধ গড়া যায়, যা বছর বছর ভেঙে যাবে না, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি ইতিমধ্যেই কথা বলবেন বলেও আশ্বাস দেন সুব্রতবাবু।
পরে মঞ্চে বলতে উঠে মন্ত্রী জানান, টাকি এবং কাঁথিতে নোনা জল থেকে মিষ্টি জল তৈরির প্রকল্প চালু হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এখনও তা করা যায়নি। কোথায় প্রকল্প গড়লে বেশি বেশি করে প্রত্যন্ত গ্রামগুলির উপকার হবে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
এ দিন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার আরও নানা প্রান্তে সুন্দরবন দিবস পালিত হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা বিবি প্রতিশ্রুতি দেন, সুন্দরবন এলাকার মানুষের সুবিধার জন্য সেতু, রাস্তা তৈরি করে দ্রুত হিঙ্গলগঞ্জে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। কাকদ্বীপ বাসস্ট্যান্ডে এ দিন উৎসবের উদ্বোধন করেন সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা। জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখ-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ সেখানে এসেছিলেন। সুন্দরবনকে বাঁচানোর জন্যই এই উৎসব পালন করা হয় বলে জানান মন্ত্রী।